নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯ ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় ভবনে চলছে পাঠদান। ভবনগুলোর ছাদে ফাটল। ধসে পড়ছে পলেস্তারা। বেরিয়ে পড়েছে ভেতরের রড ও ইট। এ ভবনের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রয়েছেন আতঙ্কে।
সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনে চলছে পাঠদান। ভবনের ছাদে ফাটল। ধসে পড়ছে পলেস্তারা।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি বিপ্লব রায় জানান, স্কুলের ভবনটিতে কয়েক বছর যাবত জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে পাঠদান করা হচ্ছে। এতে করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবাই ঝুঁকিপূর্ণ মধ্যে রয়েছে।
কান্দিউড়া ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন মল্লিক জানান, সরকার অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন তৈরি করার জন্য তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ সময় বিদ্যালয়ের পাশে থাকা স্থানীয় শুকুর বর্মন, সুনিল বর্মন খিতিস বর্মন জানান, এই বিদ্যালয়ে শিশুদের পড়াশোনা করতে পাঠাতে তাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। কখন কি জানি হয় বলা তো যায় না। তাই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রদীপ বর্মন, শাহিন মিয়া, নন্দিতা রায় জানান, আমরা স্কুলে বসে থাকতে ভয় পাই। কখন জানি আমাদের ওপর ইট, পাথর পরে যায়। আমরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করছি। আমরা চাই, সরকার আমাদের জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দিক।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামরুনাহার বলেন, বিদ্যালয়ে ১১৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের সবকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাধ্য হয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এখানে নতুন ভবন প্রয়োজন। এই ভবন দিয়ে বর্ষার সময় পানি চুয়ে পড়ে। বেশ কয়েক বছর আগে নতুন ভবন তৈরি করা এবং এই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম জানান, তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। পাশাপাশি উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন এমন অবস্থায় রয়েছে। সবগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আফতাব উদ্দিন বলেন, এ উপজেলায় তারাকান্দিয়া বাজু পাড়াসহ মোট ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অতি ঝুঁকিপূর্ণ। বিদ্যালয়গুলো হলো- চৌকিদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাচিয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিগর সইলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ডাউকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়া কম ঝুঁকিপূর্ণ আরও বিদ্যালয় রয়েছে। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য অনেক আগেই আবেদন করেছি। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এমদাদুল হক তালুকদার জানান, তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জেনেছি। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নতুন ভবন নির্মাণের অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন