সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তবুও বেপরোয়া আ.লীগ নেতা সেলিম!

অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা সেলিম রেজা। ছবি : সংগৃহীত
অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা সেলিম রেজা। ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে এলাকায় দোর্দণ্ড প্রতাপ দেখিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম রেজা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, মামলা ও দখলদারিত্ব ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি কখনো। আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও টাকার জোরে এখনো বেপরোয়া সেলিম রেজা।

সেলিম রেজা সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনি সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও পরবর্তীতে জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে ঝাঐল ইউনিয়নের পাইকোশা বাজারে সরেজমিনে গেলে উঠে আসে সেলিম বাহিনীর অত্যাচারের নানা গল্প।

মাদ্রাসারা অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে এলাকার সাধারণ শ্রমিকও সেলিম বাহিনীর অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সেলিম রেজা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। কথার বাইরে গেলেই সেলিম বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। দল ক্ষমতা থেকে গেলেও সেলিমের দাপট আগের মতোই রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শখ্যতা গড়ে তুলে এবং টাকার জোরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।

এলাকাবাসী বলেন, ১৭ বছর আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে গ্রামের মানুষকে জ্বালিয়েছে। গ্রামের কোনো লোক সেলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও তারা এখনো আগের মতোই দাপট দেখিয়ে চলছে। সম্প্রতি আব্দুল্লাহ নামে এক যুবককে রাতের অন্ধকারে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সেলিম ও তার লোকজন। এ ঘটনায় আহত আব্দুল্লাহর স্ত্রী সাথী খাতুন বাদী হয়ে সেলিম রেজাকে প্রধান আসামি করে জ্ঞাত-অজ্ঞাত ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

বাদী সাথী খাতুন বলেন, একদিন সেলিমের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয় তার স্বামীর। তারই জেরে গত ১৪ মে রাতে আব্দুল্লাহ বাজার থেকে তালা কিনে আসছিল। আসার পথে বাঁশঝারের কাছে তার ওপর হামলা চালায় সেলিম বাহিনীর লোকজন। কয়েক দফায় তাকে মারপিট করে। রাম দা দিয়ে কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে চলে যায়।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে সেলিম রেজা দীর্ঘদিন ধরে পাইকোশা ইসলামনগর দারুস সুন্নাত ফাজিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ছিলেন। কিন্তু ওই মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করেন। সভাপতি হতে না পারায় দুই দফায় অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আহত করে সেলিম বাহিনী। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাদ্রাসা মাঠের মধ্যেই অধ্যক্ষ বজলুল হুদাকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সেলিম বাহিনী। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মারপিটে অধক্ষ্যের হাতের কবজি ও হাঁটু ফেটে যায়। ২০১৭ সালে মাদ্রাসার দাতা সদস্য থাকাকালে সেলিম রেজার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। যেটি তদন্ত শেষে প্রমাণিত হলেও অদৃশ্য কারণে বিচার হয়নি সেলিম রেজার।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বজলুল হুদা কালবেলাকে বলেন, আমাকে দুবার মারপিট করে সেলিম। আমি থানায় মামলা করি। কিন্তু টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়। পাইকোশায় সেলিমের বিরুদ্ধে কথা বলার কেউ নেই। আমি বাধ্য হয়ে মামলা দুটি তুলে নিয়েছি।

পাইকোশা বাজারের নবীর উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১৮ সালে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সেলিম রেজা আমাদের জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিল।

ফাতেমা খাতুন নামে এক নারী বলেন, সেলিম ও তার বাহিনীর লোক রাকিব, সুমন, বাপ্পী এতই শক্তিশালী ও দাপট দেখায়। আমার ভাইকে এমন অত্যাচার করেছে, এমন করে মেরেছে, গামছা পেঁচিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। আমার ভাইকে উলঙ্গ করে মারধর করেছে। তাকে মেরে গুম করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু ভাগ্য ভালো তার সঙ্গে একজন ছেলে ছিল, এ কারণেই আমার ভাই বেঁচে গেছে।

আব্দুল্লাহর ভাই মাজিদুল ইসলাম বলেন, সেলিম বাহিনী গ্রামে অনেক ক্রাইম করেছে। গ্রামের মানুষকে অত্যাচার করেছে। সেলিম বাহিনীর মারধরে আমার ভাই এখন মৃত্যু শয্যায়। আমরা সেলিমের অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।

স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মুরশিদুল ইসলাম বলেন, সেলিম তার ভাই রুবেলকে ৯নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বানাতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এটা হবে না। আওয়ামী লীগের দোসরদের সভাপতি বানাবো না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চা-স্টলের মধ্যে আমার সঙ্গে তার তর্ক-বিতর্ক হয়। একদিন জামতৈল পার্টি অফিসে সেলিম আমাকে মারার হুমকি দেয়।

কোনাবাড়ি শহিদুল বুলবুল কলেজের শিক্ষক মনজুর কাদের খোকন বলেন, সেলিমের মেয়ের সঙ্গে আমার এক আত্মীয়ের ছেলের সম্পর্কের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় আমাকে ১৮ দিন জেল খাটিয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সেলিম রেজা কালবেলাকে জানান, আব্দুল্লাহ একজন জুয়াড়ি, তাকে মারধরের বিষয়ে আমি জানি না। সম্ভবত জুয়া খেলা নিয়েই তাকে মারধর করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করলেই তা প্রমাণ হবে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনা তিনি স্বীকার করেন।

নিজস্ব বাহিনী রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, সরকার যেটাই আসুক সমাজে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করি। আমাদের লোকজন থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আওয়ামী লীগ আমলে দাপটের প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষমতা যার আছে, দাপট তো সে দেখাবেই। দাপট যেটাই দেখাই, অন্যায় করি নাই।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো পোস্টে আছেন কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি জানি না, আমি তো পোস্ট ব্যবহার করি নাই।

কামারখন্দ থানার পরিদর্শক (ওসির দায়িত্বে) মো. আব্দুল লতিফ কালবেলাকে বলেন, সেলিম রেজা একটি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

সেলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো এতকিছু জানি না। তবে তার যে পরিচয়ই থাক না কেন এখন যে মামলা হয়েছে, সেই মামলায় গ্রেপ্তার হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গবেষণায় উৎকর্ষতার স্বীকৃতি পেলেন আইইউবিএটির শিক্ষার্থীরা

তাসকিনের তাণ্ডবের পরেও লঙ্কানদের লড়াকু সংগ্রহ

ইউলাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী

কিছু রাজনৈতিক দল শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছে : দুদু

কম্পিউটার সমিতির সভাপতি জহিরুলকে সনির শুভেচ্ছা

শেখ রেহানার স্বামী-দেবরের জমিসহ ১০ তলা ভবন ক্রোকের নির্দেশ

ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের থাকতে অধ্যক্ষের নোটিশ

ডেঙ্গুতে একদিনে আক্রান্ত আরও ৪১৬ জন

এনবিআরের ৪ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে

রাজশাহীতে অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

১০

সৌদিকে লিখিত বার্তা দিল ইরান

১১

পরবর্তী জন্মে প্রিয়াংকার স্বামী হতে চান শাহরুখ খান

১২

সেই সহকারী সচিব তাবাসসুম চাকরিচ্যুত

১৩

চট্টগ্রামে ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ

১৪

ভাতা কার্ডের কথা বলে দলিলে স্বাক্ষর, সম্পত্তি লিখে নেন ছেলেরা

১৫

জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক প্রধানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

১৬

বিপিএলের প্লেয়ার ড্রাফট কবে?

১৭

৩৩ ডেপুটি জেলারকে একযোগে বদলি

১৮

জুলাই আন্দোলনে নিহত / ছেলের মুখে বাবা ডাক শোনা হলো না তারেকের

১৯

ভয়াবহ সুনামির আশঙ্কা, প্রাণহানি ঘটতে পারে ৩ লাখ মানুষের

২০
X