জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত বলেছেন, আমরা চব্বিশের ছাত্র-জনতা ড. ইউনূসের উপরে যে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি, তা পূরণ করতে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাও যদি বৈদেশিক চক্রের কোনো ষড়যন্ত্রের কারণে ঘরোয়া কোনো চাপের মধ্যে তাকে পদত্যাগ করানোও হয়, ইতিহাসের পাতায় তা লেখা থাকবে। কিন্তু তার থেকেও সবচেয়ে বড় ইতিহাস আবার এই বাংলার মাটিতে একবারে বিপ্লবী সরকার গঠন করবে ছাত্র-জনতা।
শুক্রবার (২৩ মে) রাত ১০ টার দিকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট তালুকদার ডিজিটাল প্লাজায় অনুষ্ঠিত এনসিপির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেহরাব সিফাত বলেন, ড. ইউনূসকে জোর করে কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হলে ছাত্র-জনতাকে সেই দায় নিতে হবে। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা গঠন করে নতুনের রাজত্ব কায়েম করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়ে তারপরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এ দেশকে ছাড়বে ছাত্র-জনতা।
তিনি বলেন, চব্বিশের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করা শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার আত্মা ড. ইউনূসের কাছে সমর্পণ করেছে এবং তাদের প্রতিজ্ঞাও ড. ইউনূসের কাছে আছে। সে যদি আমাদের জন্য নতুন বন্দোবস্ত, সমাজ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থার রোডম্যাপ এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু না করে দিয়েই চলে যায়, তাহলে জুলাইয়ের প্রতি তার এই বেইমানি আমরা সহ্য করবো না।
আপনারা কেউ ঘরে ফিরে যাবেন না মন্তব্য করে মেহরাব সিফাত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘মনে করবেন না যে দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের অনেক বেশি সংগঠিত হওয়ার দরকার। যেহেতু ১৭ বছরের আওয়ামী জাহিলিয়াতির সময় একটি কেন্দ্রীয় ডাকে নিপীড়িত সকলে রাজপথে নেমেছিলেন। কিন্তু এবারের আন্দোলন ভাঙা নয়, গড়ার আন্দোলন। এবারের আন্দোলনে আমাদের নতুন ব্যবস্থা গড়ে দেখাতে হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকল গোষ্ঠীকে একতাবদ্ধ হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আহত ও শহীদদের বিচার ব্যবস্থা এখনো শুরু হয় নাই। বিচারের আগ পর্যন্ত এই হত্যার প্রশ্নে, রক্তের প্রশ্নে ছাত্র-জনতা ও আওয়ামী লীগ ব্যতীত সকল দলকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। যাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদী, টেম্পু স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, দোকানে দোকানে গিয়ে ডাকাতি-ছিনতাই ও মানুষকে জোর জবরদস্তি হুকুম দেওয়ার বৈশিষ্ট্য নাই সেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনতাকে একত্রিত থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে যেকোনো দলকে স্বাগতম। কিন্তু অবশ্যই চব্বিশের ছাত্র-জনতা ও আন্দোলনকে অস্বীকার করে কোন ধরনের রাজনৈতিক, কোনো ধরনের বন্দোবস্ত করা চলবে না। যদি ঘোষণাপত্র করতে হয় তবে এটাই হবে নতুন ঘোষণাপত্র। সারাদেশে আন্দোলনকারীদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বন্দোবস্ত করতে হবে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম যত জনগণ আছে প্রত্যেকটি জনগণকে সেই নতুন বন্দোবস্তের আওতায় আনতে হবে এবং আপামর ক্ষমতা থাকবে জনগণের কাছে, ক্ষমতার কাছে না।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিসি) সদস্য আজগর শেখের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ, সদস্যসচিব মাসুম বিল্লাহ, এনসিসির রাজৈর উপজেলার সদস্য মহাসিন ফকির, জাবের হাওলাদার, রাজৈর উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতা আফরান জামিসহ জেলা ও উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিসির বিভিন্ন নেতাকর্মী।
মন্তব্য করুন