চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০০ শতক জমির মধ্যে ৮৫ শতক জমিই দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ভবন নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে পড়েছে।
গত ২৮ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ের এ চিত্র দেখা গেছে।
জমি উদ্ধারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিচালনা পরিষদ বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেও প্রভাবশালীদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের জমি দখলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের মানসিক বিকাশে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। দখলকৃত জমি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন আলমগীর।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হলেই সড়কে অবস্থান করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে দখলকৃত জমির সাইনবোর্ডে লিখা মুঠোফোনে নম্বরে বারবার কল করলেও তাদের ব্যক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৬০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক রয়েছে। ১৯৬২ সালে জনৈক জামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বিদ্যালয়ের নামে এক একর জমি বিক্রিয় মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু জামাল হোসেনের উত্তরসূরি আবুল কালাম ভূমিদাতা দাবি করে আসলেও কৌশলে এসব জমি নিজের নামে নামজারি করে নেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মিস মামলায় আবুল কালামের নামজারি বাতিল করে দেন ভূমি অফিস।
২০১২ সালে বিদ্যালয়ের এসব জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। এ সময় স্থানীয়রা জমি উদ্ধারে মানববন্ধনসহ ভূমিমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হারিস বিন জাহিদ জানায়, স্কুলে আসলে মাঠের অভাবে আমরা খেলতে পারি না। সারাক্ষণ শ্রেণিকক্ষে বসে থাকতে হয়।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়শা আক্তার ইমু জানায়, মাঠ না থাকায় রাস্তায় খেলি, গাড়ি চলাচল করলে মেমরা আমাদের পাহারা দেয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামিরা পারভীন বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ের ৮৫ শতক জমিতে বেড়া দিয়ে দখল করে নেয় আবুল কালাম। এখন বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়া আমাদের কোনো মাঠ নেই। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় জমির অভাবে নতুন ভবনও নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহম্মেদ বলেন, আদালত ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্কুলের জমি ছেড়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর জমি দখল করে রখেছেন আবুল কালামের পরিবার। এ বিষয়ে আমি সংবাদ সম্মেলনও করেছি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ, নতুন ভবন নির্মাণে জমি দরকার। এ জন্য আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন আলমগীর বলেন, বিদ্যালয়ে যারা ভূমি দিয়ে ছিল তাদের উত্তরসূরিরা তাদের নামে কৌশলে ৮০ শতক জমি বিএস খতিয়ানে নামজারি করে নিয়েছিল। আমি এ পর্যন্ত ১০ শতক উদ্ধার করেছি। বাকি জমিও উদ্ধার করা হবে। প্রয়োজনে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া হবে। স্কুলের জমি দখল করে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন