বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, জনগণ তথা রাজনৈতিক দলের মতামতকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে এপ্রিলে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ দুরভিসন্ধিমূলক ও স্বৈরাচারী মনোবৃত্তির পরিচয় বহন করে। কেনো প্রধান উপদেষ্টা বা অন্তর্বর্তী সরকার এপ্রিলে নির্বাচন নিতে চায় তা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে একমাসের মধ্যে সংস্কার করে অবলীলায় ডিসেম্বরের আগেই নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব।
রোববার (৮ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট পৌর শহরের অগ্রযাত্রা কনভেনশন সেন্টারে এক ঈদ পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বেলেন তিনি। সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আয়োজিত এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শিক্ষক , সাংবাদিক , ব্যবসায়ী, আলেম ,ওলামা, গারো, হাজং , হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতারা এবং চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া , ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে ঈদুল আজহা আরও প্রাণবন্ত হতো, যদি নির্বাচিতদের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হতো। তিনি বলেন জন আকাঙ্ক্ষা ছিল দ্রুত নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা।
এ লক্ষ্যে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার সামনেই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। কিন্তু ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতিকে ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর সময় আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে সময়সীমা উল্লেখ করেছেন, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
তিনি আরও বলেন, বিএনপিও যেনো তেনো নির্বাচন চায় না। বিএনপি অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন যাচাই করতে চায়, জনগণের আস্থা ও রায় নিয়ে জনগণের সেবা করতে চায়।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রশ্ন রেখে বলেন, তিন মাসের মধ্যেই অতীতে তত্ত্বাবধয়ক সরকার যেখানে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন অয়োজন করেছে, সেখানে তিনটি তত্ত্বাবধয়ক সরকারের সময় পার করেও ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কেন নিরপেক্ষ নির্বাচন অয়োজন করতে পারছে না?
তিনি বলেন, সরকারের ভেতর ও বাইরে কয়েকটি স্বার্থান্বেষী মহল ড. ইউনূসকে ব্যবহার করে নির্বাচন অনিশ্চিত করতে যড়যন্ত্র করছে । ড. ইউনূসও তাদের প্ররোচনায় সম্প্রতি কয়েকটি বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে নিজেও বিতর্কীত হচ্ছেন। যা বিএনপিসহ রাজনৈতিক দল এবং জনগণের কাছে বিস্ময়কর। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তার ওপর আস্থা রেখে তার নেতৃত্বেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়েছে। কিন্তু তিনি বা তার সরকার কেন রাজনৈতিক দলকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করছে তা জাতি জানতে চায়।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, হালুয়াঘাট উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মোয়াজ্জেম হোসেন মাস্টার, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, সদস্য সচিব আবদুল আজিজ খান, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আযহারুল ইসলাম কাজল, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যন শাহ আফাজ উদ্দিন, ট্র্যাইবল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি বিপুল হাজং, হালুয়াঘাট শাখার চেয়ারম্যন সুব্রত রেমা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জয়দেব দত্ত, ময়মনসিংহ কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল এখলাস উদ্দিন, কয়লা আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু সরকার, হালুয়াঘাট প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি সুমন সুভ, অপরাংশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রজ্জাক, হলুয়াঘাট পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সাহা, চব্বিশের গণ অভ্যুত্থানে শহীদ বিজয় ফরাজীর পিতা সায়েদুল ফরাজী, ইউপি চেয়ারম্যন শফিকুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার ইউনূস হোসেন খান, সাবেক চেয়ারম্যন আবদুল হাই, মোনায়েম হোসেন তালুকদার খোকন, প্রাথমিক শিক্ষক নেতা আবুল মাস্টার, আবদুল হান্নান, এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দেড় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আনন্দ মুখর অনুষ্ঠানটি মিলন মেলায় পরিণত হয়। উপস্থিত সবাইকে মধ্যাহ্ন ভোজে আপ্যায়ন করানো হয়।
এ ছাড়াও রাতে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স হালুয়াঘাটের স্বদেশী ইউনিয়নের নশুল্লা বাজারে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেন।
মন্তব্য করুন