মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে রাজস্ব খাতে নেওয়া হাকালুকি হাওরের ১৫টি বিলকে পুনরায় অভয়াশ্রম ঘোষণার দাবি হাওর তীরের মানুষের। শুধু তাই নয়, হাকালুকি হাওরকে বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি দীর্ঘদিনের।
তা ছাড়া বিগত ১৫ বছর যারা হাওরে লুটপাট ও পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে বলে জানিয়েছে ‘হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও’ ও ‘হাকালুকি হাওর তীরের সচেতন নাগরিক সমাজ’।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় বর্তমানে মোট স্থায়ী অভয়াশ্রম রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলায় রয়েছে ৫টি, শ্রীমঙ্গলে ১টি, কুলাউড়ায় ১টি ও জুড়ীতে ২টি। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার।
হাকালুকি হাওরের ছোট-বড় ২৩৮ বিলের মধ্যে ২২টিকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বয়ং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর ডিও লেটারে অভয়াশ্রম বাতিল করে ১৫ বিলকে রাজস্ব খাতে হস্তান্তর করা হয়। যে ৭টি বিল অভয়াশ্রম হিসেবে ছিল সেগুলোতে সরকারদলীয় লোকজন লুটপাট চালিয়েছে। হাওর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয় হাকালুকি হাওরকে। বিগত ১৫ বছরে উন্নয়ন নয়, শুধু লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে হাওরে। ধ্বংস করা হয়েছে হাওরের পরিবেশ। সরকার পরিবর্তন হলেও লুটেরাদের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ইজারার নামে হাওরের বিলগুলোতে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে মাছ শিকারের নামে চলছে মাছ লুট।
বড়লেখা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিসবাহ উদ্দিন আফজল জানান, হাকালুকি হাওরকে রক্ষার এখনই মোক্ষম সময়। হাওর তীরের বাকি ৪টি উপজেলার মৎস্য বিভাগ এগিয়ে এলে হাওরে যদি অর্ধশত অভয়াশ্রম বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে হাকালুকি হাওর থেকে মাছ বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আকারে ছোট এবং যোগাযোগ সমৃদ্ধ জায়গার বিলকে অভয়াশ্রম করা হলে দেখভাল ভালোভাবে করা যাবে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন।
তবে প্রস্তাবিত বিলগুলোকে ইজারার আওতায় নিতে গেলে কিছুটা উন্নয়ন ব্যয় করতে হবে। যেমন বিলগুলোকে খনন করে বাড়াতে হবে বিলের গভীরতা। এসব বিলে যাতে বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে কেউ জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে না পারে তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব প্রস্তাবনাও তারা করেছেন।
হাকালুকি হাওরে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা প্রতিনিধি তৌহিদুর রহমান জানান, অভয়াশ্রম বাড়ালে শুধু মাছের উৎপাদনই বাড়বে না স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাওরের ইকোসিস্টেম রক্ষা পাবে। অতিথি পাখির আনাগোনা বাড়বে। সর্বোপরি হাওরের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জন্য বিকল্প জীবিকায়নের চিন্তা করা লাগবে না। তাদের জীবনমানেরও উন্নয়ন হবে।
হাকালুকি হাওর তীরের তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এখলাছুর রহমান জানান, বিগত সরকারের লোকজন হাওরে হরিলুট চালিয়েছে। ডিও লেটারে রাজস্ব খাতে নেওয়া বিলগুলোকে ফের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে জনগণের কল্যাণে পরিচালিত হয়।
মন্তব্য করুন