বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামি হয়েছেন কুমিল্লা মহানগর ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও জুলাই আন্দোলনের ছাত্রনেতারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ইব্রাহীম খাঁন ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়া আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়।
ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহীম খাঁন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ির বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তাকে একাধিক স্থানে আন্দোলন বিরোধী মহড়ায় অংশ নিতে দেখা গেছে। সাবেক সংসদ সদস্য বাহারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় কাজ করতেন। ইব্রাহীমের বড় ছেলে নয়নের বিরুদ্ধে গত সংসদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরাসরি অস্ত্র হাতে নিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর ইব্রাহীম খাঁনসহ ৯৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. এমরান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যথাযথ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি করেছি। পুলিশ বলেছে আসামিরা পলাতক, গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পলাতক থেকে ইব্রাহীম কীভাবে ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয় আমি জানি না। আমি চাই মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।
কুমিল্লা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, আসামি ও আওয়ামী দোসরদের যারা দলে জায়গা দেয় তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষের লোক। তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপির মতো এতো বৃহৎ দলে এমন বিতর্কিত লোককে কমিটিতে রাখা ঠিক হয়নি। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলায় মামলার আসামিদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করে।
অভিযোগ উঠা ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহীম খাঁন কালবেলাকে বলেন, এলাকার কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। সাবেক এমপি বাহারের সঙ্গে যেসব ছবি দেখছেন, এগুলো এডিট করে বসানো হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগও মামলা করেছে। আমি জন্মের পর থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জানতে চাইলে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দীন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা মামলার আসামি যেন বিএনপিতে কোনোভাবেই প্রবেশ করতে না পারে সেটা আমাদের দলীয় প্রধানের নির্দেশ। ইব্রাহীম বিগত সরকারের আমলে সাবেক এমপি বাহারের ডোনার ছিলেন। এখন শুনেছি মহানগর ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছে, এটা আমাদের জন্য যেমন ক্ষোভের তেমনি অপমান ও লজ্জার।
কুমিল্লা মহানগর জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা মো. শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, দলের কেউ যদি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলার আসামি হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগের কোনো প্রমাণ থাকলে আমাকে পাঠান। আমি সেগুলো কেন্দ্রে পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামিদের ধরার চেষ্টা করছি। বৈষম্যবিরোধী মামলার আসামি কোনো দলে অনুপ্রবেশ করেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমরা সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
মন্তব্য করুন