জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ওয়ার্ড বিএনপি অফিসে সালিশি বৈঠকের নামে কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর (১২) বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সে বাড়িতেই থাকত। গত ১৪ জুন দুপুর ২টার দিকে প্রতিবেশী শাহিন (৩৫) ফুঁসলিয়ে ও ভয় দেখিয়ে তাকে নিজের ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর শাহিন একইভাবে আরও চার দিন বিভিন্ন সময়ে ওই কিশোরীকে তার ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে।
এরপর ১৭ জুন বিকেল ৩টার দিকে আরেক প্রতিবেশী পারভেজ (৪০) বিষয়টি জানতে পেরে কিশোরীকে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে শাহিনের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা সবাইকে বলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পারভেজও তাকে ধর্ষণ করে। এরপর প্রতিবেশী লাভলু (৩২) বিষয়টি জানতে পারে।
পরে গত ১৯ জুন দুপুর ১টার দিকে লাভলু বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই কিশোরীকে ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই কিশোরী চিৎকার শুরু করলে লাভলু পালিয়ে যায়।
এসব ঘটনা জানাজানি হলে, গত রোববার রাত ৮টার দিকে আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়া (করিম দহ) মোড় এলাকায় স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ে সাবেক ইউপি সদস্য লিটন তালুকদারের (৫৫) নেতৃত্বে কথিত সালিশ বৈঠক বসে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. লিটন তালুকদার, মো. সেলিম (২৩) এবং মো. কবির মিয়াসহ (২৮) অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার-পাঁচজন মিলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ধর্ষণকারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
তারা আপস মীমাংসার কথা বলে ফরিদা বেগম ও তার মেয়েকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয়। ফরিদা বেগম নিরুপায় হয়ে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়।
এ সময় লিটন অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে লিটন তালুকদার, সেলিম এবং কবির মিয়াকে আটক করে। এ সময় ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পরে আটক আসামিদের নিয়ে পলাতক শাহিন, পারভেজ ও লাভলুসহ অন্যদের আটকের চেষ্টা করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।
সরিষাবাড়ী থানার ওসি মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মন্তব্য করুন