রেজাউল করিম, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:২৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যৌনপল্লীতে খাদ্য সংকট, মানবেতর জীবনযাপন দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের

দৌলতদিয়া যৌনপল্লী একটি গলিপথ। ছবি : কালবেলা
দৌলতদিয়া যৌনপল্লী একটি গলিপথ। ছবি : কালবেলা

দেশের সবচেয়ে বৃহৎ যৌনপল্লী রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনের পর থেকে শুরু হয়েছে এখানকার যৌনকর্মীদের মানবেতর জীবনযাপন। এরপর পদ্মা সেতু চালুর পর পল্লীতে শুরু হয়েছে হাহাকার। খদ্দেরের অভাবে জীবিকা সংকটে দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা। সবচেয়ে বেশি কষ্টে জীবনযাপন করছেন পঞ্চাশোর্ধ নারীরা।

জানা গেছে, দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন। এদের মধ্যে ১ হাজার ৫০ জন নিয়মিত রয়েছে। বাকিরা অনিয়মিত থাকেন এখানে। এখানে প্রায় ৩০০ বাড়ি রয়েছে। যৌনপল্লীতে শিশুর সংখ্যা ৬০০ জন। পল্লীতে বর্তমানে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী রয়েছে।

সম্প্রতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর সেই আগের মতো ভিড় নেই পল্লীর ভেতরে। শুনশান নিরবতা চারদিকে। এক সময় পল্লীর প্রধান গলিতে ভিড় লেগে থাকলেও সেই গলি এখন অনেকটাই ফাঁকা। খদ্দেরের আশায় নারীরা সেজে ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

তবে এখন আর খদ্দের সেভাবে আসে না বলে জানান বেশ কয়েকজন যৌনকর্মী। কথা হয় যৌনকর্মী ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, দিন তারিখ মনে নেই কবে আসছিলাম। তবে শুধু মনে আছে যেদিন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় সেদিন এখানে আমার আসা। আমার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। আমার তিনটি সন্তান রয়েছে। তারা এই জগত থেকে অনেক দূরে। আমি একাই পল্লীতে আছি। আমার বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। পল্লীর ভেতরে মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। কাজের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই।

৫৭ বছর বয়সী যৌনকর্মী ছন্দা বলেন, পল্লীর অবস্থা এক সময় ভালো ছিল। বর্তমানে পল্লীর অবস্থা খুব খারাপ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট ও লঞ্চ ঘাটে লোকজন আসে না। সবাই পদ্মা সেতু হয়ে যায়। তাই আমাদের হাহাকার শুরু হয়েছে। আমরা এখন চলে যেতে চাই। কিন্তু আমাদের তো যাবার মতো কোনো জায়গা নাই। সরকার যদি আমাদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে বেঁচে থাকতে পারবো।

পল্লীর আরেক বাসিন্দা বলেন, দৌতলদিয়া ফেরী ঘাট যখন যানজট লেগে থাকতো তখন ভালো ছিলাম। খদ্দের আসতো পল্লীতে। কিন্তু এখন কেউ খবর নেয় না। আমরা এখান থেকে চলে যেতে চাই। সরকার যদি আশ্রয়নের ঘরে থাকার জায়গা করে দিতেন আমরা চলে যেতাম।

দৌলতদিয়ার পল্লীর ভেতরে রয়েছে অসহায় নারী ঐক্য সংগঠন। ওই সংগঠনের সভাপতি ঝুমুর বেগম বলেন, পল্লীর মধ্যে ৩৫০ জন বয়স্ক নারী আছেন। এদের চরম খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। এরা এখন চলে যেতে চায়। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্যার আসছিলেন। তিনি বলেছেন ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় দৌলতদিয়া যৌনপল্লী। পদ্মা সেতুর চালুর পর এখানে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আমি সরেজমিনে সেখানে গিয়েছিলাম। যৌনপল্লীর সবাই আমাদের সমাজের অংশ। সেখানে কয়েকটি সংস্থা কাজ করে। আমি নির্দেশনা দিয়েছি ৫০ বছরের উপরে কতজন নারী এখানে আছেন। প্রাথমিকভাবে এই তালিকা প্রস্তুত করে আমরা চিন্তা ভাবনা করবো তাদের কিভাবে পুণর্বাসিত করা যায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২ যুবককে গণপিটুনি

সেই তন্বীর বিরুদ্ধে লড়বেন জান্নাতুন নাহার

দুই বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল হেলপারের

সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যুতে সিইউজে’র শোক

রাজধানীর পান্থপথে দেয়াল ধসে নিহত ১

কালকিনিতে আনিসুর রহমান খোকন / মায়েদের পাশে থাকবে বিএনপি

দিনে কত কাপ চা খাওয়া উচিত, জানালেন বিশেষজ্ঞ

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সিলেবাস কেমন হবে, জানা গেল

শান্ত-সৌম্যর বাদ পড়ার কারণ জানালেন গাজী আশরাফ

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

১০

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

১১

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

১২

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

১৩

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৪

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

১৫

চট্টগ্রামে শিল্পী সম্মিলন ও আর্ট ক্যাম্পে মিলন মেলা

১৬

যে কারণে এশিয়া কাপ দলে সোহান-সাইফ, জানালেন প্রধান নির্বাচক

১৭

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে, জানালেন প্রশাসক

১৮

ভারতে মোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন থালাপতি বিজয়

১৯

‘নির্বাচনে কাজ করবে সাড়ে ৬ লাখ আনসার-ভিডিপি’

২০
X