সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, শেখ হাসিনা ট্যাংকে চড়ে বা খাকি পোশাকে করে ক্ষমতায় আসেননি। তিনি একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিতাড়িত হয়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় বরিশাল নগরীর সদর রোডে বিডিএস হল রুমে আয়োজিত ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিক বরিশাল জেলা কমিটি এ সংলাপ আয়োজন করে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় এসে ১৫/১৬ বছরের মাথায় এমন পর্যায়ে গিয়েছেন যে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের এমন রোষানলে পড়েছেন যে তার বিরুদ্ধে, তার সরকার ও দলের বিরুদ্ধে একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, যাতে তিনি বিতাড়িত হতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা কীভাবে স্বৈরতন্ত্র ও স্বৈরাচারে পরিণত হলেন? শেখ হাসিনার স্বৈরাচারীরে পরিণত হলেন কারণ স্বৈরাচারী ব্যবস্থা আমাদের দেশে বিরাজমান ছিল। কতগুলো বিদ্যমান নীতি, নিয়ম পদ্ধতি, প্রতিষ্ঠান, আইনকানুন সেগুলো কিন্তু শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী পরিণত করেছে।
সুজন সম্পাদক বলেন, তিনি কিছু কিছু আইনকানুনে পরিবর্তন এনেছেন। সংবিধান সংশোধন করেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন করেছেন। এর ফলে আমাদের ওপর স্বৈরাচারী হিসেবে আমাদের ঘাড়ে বসেছেন। এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, এটা মানুষের জন্য অসহনীয় হয়েছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে আমাদের ভোটাধিকার হরণ ও দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন। আমাদের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান, পদ্ধতি সবগুলোকে তছনছ করে ফেলেছেন তিনি। এসব প্রেক্ষাপটেই একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল এবং গণঅভ্যুত্থানের মুখে তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
বদিউল আলম বলেন, এরপর একটি অন্তর্বর্তী সরকার হলো। এ সরকারের একটা দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা। একই সঙ্গে যেসব নিয়ম পদ্ধতি প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে দানবে পরিণত করেছে এগুলোর সংস্কার করা। এজন্য সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন করেছে। এখন একটা ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। যে ঐকমত্য কমিশনের ভিত্তিতে এখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি, আলাপ-আলোচনা করে কতগুলো মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে আমরা একমত হওয়ার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে আমরা কতগুলো সুপারিশ প্রণয়ন করব। আমরা আশা করি এটা একটা জাতীয় সনদে পরিণত হবে এবং এটা স্বাক্ষরিত হবে। যেটা প্রয়োগ করা, মেনে চলা, রাজনৈতিক দলগুলো মেনে চলতে বাধ্য হবে।
সুজন সম্পাদক আরও বলেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় এর বাইরে বহু নাগরিক আছে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ মতামত আছে। আমরা সংবিধান সংশোধনের কথা বলছি, কতগুলো মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি। সংবিধান হলো জনগণের মতামতের প্রতিফলন, জনগণের অধিকারের রক্ষাকবচ। তাই জনগণের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যই আমরা সুজনের পক্ষ থেকে সারাদেশে ১৫টি এই ধরনের সংলাপের আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, জনগণ মতামত দিতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে হবে, সংবিধানে কী কী পরিবর্তন হতে হবে, নির্বাচনী ব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন হতে হবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থা কী কী পরিবর্তন হতে হবে, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কী কী ব্যবস্থা হতে হবে, পুলিশকে আরো কার্যকর করার জন্য কী কী পরিবর্তন আনা দরকার, এসব লক্ষ্যে আমরা ১৫টি এলাকায় জনগণের মতামত নিচ্ছি এবং এসব মতামতের ভিত্তিতে আমাদের পক্ষ থেকে একটি খসড়া জাতীয় সনদ প্রণয়ন করেছি।
বদিউল আলম বলেন, নাগরিকের মতামতের মাধ্যমে যাতে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হয় এবং তার ফলে যেন একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটে, একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর আগে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল জেলার সভাপতি অধ্যাপক গাজী জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বরিশাল নগরী, বিভিন্ন জেলার সামাজিক সংগঠন, শিক্ষক, নারী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের বক্তৃতার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।
মন্তব্য করুন