খান রুবেল, বরিশাল
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অলৌকিক গজার মাছ ঘিরে ‘সান্টু ফকির’-এর ব্যবসা

বরিশালের উজিরপুরে সান্টু হাওলাদারের বাড়ির পুকুর। ছবি : কালবেলা
বরিশালের উজিরপুরে সান্টু হাওলাদারের বাড়ির পুকুর। ছবি : কালবেলা

বাড়ির পাশে পুকুরভর্তি গজার মাছ। এক একটির ওজন ৪-৫ কেজি। তবু ধরেন না কেউ। তার থেকেও আশ্চর্যের বিষয় হলো, পানিতে তলিয়ে গেলেও পুকুর ছেড়ে যায় না গজারগুলো। সকাল হলেই খাবার খেতে তীরে আসে, যা দেখতে পুকুরপাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। অনেকে মনোবাসনা পূরণে নিয়ত করে পুকুরে গজার মাছকে খাবার দিচ্ছেন।

অদ্ভুত এমন গজার মাছের সন্ধান মিলেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক ইউনিয়নের উত্তর ধামুরা গ্রামের বাসিন্দা সান্টু হাওলাদারের বাড়ির পুকুরে। স্থানীয়দের দাবি, পুকুর দখল করে রাখা গজার মাছ কেউ ধরতে গেলেও শারীরিক বা মানসিকসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি। তাই মারা গেলে রান্না না করে মাটিচাপা দেওয়া হয় রহস্যময় এই গজার মাছ।

সান্টু হাওলাদারের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামী সান্টু হাওলাদার দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফিরে কীটনাশকের ডিলারের ব্যবসা করতেন। হঠাৎ এক রাতে স্বপ্নে দেখে পুকুরঘাটে গিয়ে দেখতে পান গজার মাছের ঝাঁক। তার দাবি, হজরত শাহজালাল (রা.)-এর মাজারের গজার মাছ অলৌকিকভাবে এসেছে তাদের পুকুরে, যা সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে গিয়ে মিলিয়েও দেখেছেন তারা।

তিনি বলেন, পুকুরে থাকা গজার মাছগুলোর বয়স ১৫-২০ বছর হবে। এগুলোর কিছু বিশেষ দিক রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে যখন চারদিক তলিয়ে যায় তখনো পুকুর ছেড়ে যায় না। আবার পুকুরে জিয়ানো অন্য মাছও খায় না তারা। সকাল হলেই খাবার খেতে ঘাটলায় আসে। গজারগুলোকে প্রতিদিন সকালে গুঁড়া মাছ খেতে দেওয়া হয়। আর মারা গেলে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে আমাদের এক আত্মীয় অবহেলা করে গজার ধরতে এসেছিল। এজন্য সে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকেই গজার মাছের আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেন গ্রামবাসী। তবে ১০ শতকের এই পুকুরটিতে বর্তমানে কী পরিমাণ গজার মাছ রয়েছে তা জানা নেই কারও।

গজার মাছ ঘিরে এমন অলৌকিক ঘটনা স্বীকার করছেন প্রতিবেশীরাও। তবে গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাড়ির মালিক সান্টু হাওলাদার। অথচ পুকুরে গজার মাছ ঘিরে নিজের ব্যবসা পরিবর্তন করেছেন তিনি। এখন জিন ছাড়ানো, তাবিজ-কবজ এবং তদবির দিয়ে থাকেন সান্টু হাওলাদার। এ কারণে ‘সান্টু ফকির’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।

এদিকে সান্টু হাওলাদারের পুকুরে গজার নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ কুসংস্কার বলে মন্তব্য করেছেন উজিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রসেন মজুমদার। তিনি বলেন, দেশে বিলুপ্ত প্রজাতির যে ৬৪টি দেশীয় মাছ রয়েছে তার মধ্যে একটি গজার মাছ। মা এবং পুরুষ গজার পোনা ১০ সেন্টিমিটার না হওয়া পর্যন্ত ছেড়ে যায় না। অথচ এই মাছকে অনেকে অমঙ্গলের প্রতীক হিসেবেও দেখে থাকে। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো নিয়ে সরকার যদি আলাদা আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করত তবে এসব মাছের প্রাচুর্যতা বাড়ানো যেত। এতে আস্তে আস্তে কুসংস্কারও দূর হতো।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বায়ুদূষণে ‘প্রথম স্থানে’ ঢাকা

বগুড়ায় মিশ্র সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

মোবাইল নেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে হত্যাচেষ্টা, সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

দুপুর পর্যন্ত যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে এভারকেয়ার হাসপাতল

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে একহাত নিলেন ইমরান খান

অলৌকিক গজার মাছ ঘিরে ‘সান্টু ফকির’-এর ব্যবসা

ঢাকায় চাকরি দিচ্ছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক

আজ বাজারে আসছে নতুন নোট, আসল-নকল চিনবেন যেভাবে

কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে নিয়োগ দিচ্ছে সিঙ্গার

১০

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

১১

‘দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন খালেদা জিয়া’

১২

নিখোঁজ সাবার মরদেহ মিলল প্রতিবেশীর খাটের নিচে

১৩

গাজায় তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৫

১৪

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

৪ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

দেশে ভূমিকম্প অনুভূত, উৎপত্তিস্থল যেখানে

১৭

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প

১৮

বিএসএফের গুলিতে নিহত ব্যক্তির লাশ এখনো ফেরত পায়নি পরিবার

১৯

শীতের সঙ্গে ভিড় বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে

২০
X