বগুড়ার শাজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষক শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে শাজাহানপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী মোছা. শামসুন্নাহার। এই মামলায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
সোমবার দুপুরে মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম। এর আগে শনিবার সকালে শাহজালাল তালুকদার পারভেজকে শাজাহানপুরের আশেকপুর ইউনিয়নের মাথাইল চাপড় এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল গ্রামের রুকসানা আক্তার ও উজ্জ্বল (৪০)। এরা সাগরের বোন ও চাচা।
পারভেজ উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল এলাকার সাবেক মেম্বার মনসুর তালুকদার ওরফে মন্টু মিয়ার ছেলে। তিনি স্থানীয় বিএম কলেজের প্রভাষক ও আশেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন।
নিহতের স্বজন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলীর দাবি, পূর্বের এক হত্যা মামলায় বড় ভাই স্বাক্ষী হওয়ায় ছোট ভাই পারভেজকে হত্যা করা হয়। এ হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন সাবরুল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার। হত্যার দেড় মাস আগে থেকে হুমকিও দিয়ে আসছিলেন সাগর তালুকদার। এই সাগর সম্পর্কে নিহত পারভেজের ভাতিজা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাগর তালুকদার ও তার লোকজন দীর্ঘদিন ধরে সাবরুল বাজার ও পারভেজদের বাড়িতে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়-ভীতি দেখাচ্ছিলেন। শনিবার সকালে পারভেজ সাংসারিক প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মাথাইল চাপড় এলাকায় সাগর তালুকদারের সন্ত্রাসী বাহিনী তার পথরোধ করে হাসুয়া, রামদা দিয়ে হামলা করে। তাদের হামলা থেকে বাঁচতে পাশের সুমনের বাড়িতে আশ্রয় নেন পারভেজ। কিন্তু সেখানেও গিয়ে কুপিয়ে তার হাত বিচ্ছিন্ন করে। পরে পারভেজের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে পারভেজকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ৩১ মে সাবরুল এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী সিহাব বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাগর। মামলার চার্জশিটে সিহাব বাবু হত্যার ঘটনায় স্বাক্ষী করা হয় সাবরুল বাজারের তৎকালীন সভাপতি পারভেজের বড় ভাই নুরুজ্জামান তালুকদার পান্নুকে। এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন সাগর। এসবের জেরে নুরুজ্জামান তালুকদারকে দেড় মাস আগে তুলে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করেন সাগর ও তার লোকজন। ওই সময় থেকে পারভেজকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়ে আসছিল।
নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, চার্জশিটে আমার নাম দেখে প্রায় দুই মাস আগে সাগর দোকানে এসে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে কেন মামলার স্বাক্ষী হয়েছি। স্বাক্ষী থেকে সরে যেতে হবে। আমি বলেছিলাম স্বাক্ষীর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তখন থেকে আমাদের ওপর তার ক্ষোভ। এরপর আমাকে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে। তখনই সাগর আমাকে বলেছিল, তোকে শুধু চাকু মারলাম। তোর ভাইকে খুন করে ফেলবো। পরে পারভেজকে হুমকি দিতো সাগর। এসব নিয়ে থানা-পুলিশের কাছেও গিয়েছিল পারভেজ।
সাগর তালুকদারের বিষয়ে আশেকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, সাগর এই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকার কেউ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে না। বিভিন্ন এলাকার সব সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে তার এখানে এসে আশ্রয় নেয়। এই সাগর আমাকেও হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আমি এসব বিষয় জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে বলেছিলাম। কিন্তু কেউ বিষয়টি আমলে নেয়নি।
শাজাহানপুর থানা পুলিশ সূত্র বলছে, সাগর তালুকদারের নামে সাবরুলের সিহাব বাবুসহ দুটি হত্যা মামলা আছে। চাঁদাবাজি মামলা ৪টি, মাদক ব্যবসায়ী মামলা ৩টি, অস্ত্র আইনে মামলা ১, দ্রুত বিচার আইনে ১টি, অন্যান্য ধারা ২ টিসহ মোট ১২ টি মামলা। জেল হাজতে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, পারভেজ হত্যার ঘটনায় সাগরের হুমকির বিষয়টি আমরা শুনেছি। গত ১৩ আগস্ট সাগর তালুকদার এক মামলায় আত্মসমর্পণ করে জেল হাজতে আছেন। তদন্তে সম্পৃক্ততা পেলে তাকেও আসামি করা হবে। গ্রেফতার দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
মন্তব্য করুন