নওগাঁর মান্দায় কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতিকে বাতিলের জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ সুপারিনটেনডেন্ট মো. জিয়াউর রহমান মাদ্রাসার এডহক কমিটি বাতিলের উদ্দেশে ভুয়া পদত্যাগপত্র তৈরি করে শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়েছেন। তিনি ওই কমিটিরই দুই সদস্যের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে এই জালিয়াতি করেছেন।
এ দিকে বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল নবী গত সোমবার (২৮ জুলাই) জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ দিকে ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়ায় মাদ্রাসার এডহক কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল নবী তার ক্ষমতাবলে গত ২১ মে সুপার মো. জিয়াউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
জানা যায়, গত ৬ মার্চ ওই মাদ্রাসার এডহক কমিটি পাশ করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এর ৫ দিন পর ওই মাসের ১১ তারিখে সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে একটি অভিযোগ দেন মাদ্রাসার সুপার এবং সেইসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার বরাবর শিক্ষক প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান ও অভিভাবক সদস্য বাবুল হোসেনের পদত্যাগ পত্র দিয়ে কমিটি বাতিলের আবেদন করেন। এ ঘটনায় শিক্ষক প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান ও অভিভাবক সদস্য মো. বাবুল হোসেনের স্বাক্ষর জাল করে সুপার মো. জিয়াউর রহমান একটি ভুয়া পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করেছেন বলে মাদ্রাসার সভাপতি অভিযোগ দেন।
মাদ্রাসায় গিয়ে জানা যায়, সুপার মো. জিয়াউর রহমান মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রেজাউল নবীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রারের কাছে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ অভিযোগের প্রায় দুই মাস পর গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত এক মিটিংয়ে সব শিক্ষক, কর্মচারী এবং পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে এডহক কমিটির সভাপতি ও মাদ্রাসার সবাই মিলেমিশে কাজ করার বিষয়ে একটি রেজুলেশন করা হয়। এতে সর্ব-সম্মতভাবে বর্তমান কমিটি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর মাদ্রাসার সুপারের করা চাঁদাবাজির অভিযোগের তদন্ত এলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, সুপারের কাছে সভাপতি চাঁদা চেয়েছেন এমন কোনো কথা আমরা কখনো শুনিনি। তবে মাদ্রাসার সভাপতির তালিকা পাঠানো নিয়ে সভাপতির সাথে মনোমালিন্য ছিল। এ কারণেই হয়তোবা এ অভিযোগ করতে পারেন।
পদত্যাগ পত্রে শিক্ষক প্রতিনিধি হাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরের মিল না পাওয়ায় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি স্বাক্ষর করেছেন বলে দাবি করেন। তবে তাকে স্বাক্ষর করতে বললে তিনি যে স্বাক্ষর করেন, সেই স্বাক্ষরের সঙ্গে পদত্যাগপত্রের স্বাক্ষরের কোন মিল নেই বলে সব শিক্ষক-কর্মচারীরাও সেটা নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিভাবক প্রতিনিধি বাবুল হোসেন বলেন, আমি কমিটি থেকে পদত্যাগ করিনি।
মাদ্রাসার সুপার মো. জিয়াউর রহমান কালবেলাকে বলেন, সভাপতি রেজাউল নবী আমাকে বলেছেন, কমিটি বের করে আনতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে, তাই সেটা দিতে হবে। তবে সভাপতি টাকা চেয়েছেন তার কোন প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি এবং এই বিষয়ে কাওকে কিছু জানাননি বলে দাবি করেন।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি মো. রেজাউল নবী এ ঘটনাকে চরম অনৈতিক ও প্রতারণামূলক উল্লেখ করে কালবেলাকে বলেন, এ ধরনের জালিয়াতি শুধু আইন পরিপন্থিই নয়, বরং প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞাস্বরূপ। আমি দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে অভিযোগ করেছি।
বুধবার (৩০ জুলাই) জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ কালবেলাকে বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি তদন্ত সংক্রান্ত চিঠি পাওয়া গেছে। এখনো তদন্ত সম্পন্ন হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
একই দিন অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কালবেলাকে বলেন, অভিযোগ জমা পড়েছে কি না, তা আমি খতিয়ে দেখছি। যাচাই করে আপনাকে জানাবো।
মন্তব্য করুন