

নওগাঁয় নকল মৎস্য ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ওষুধ তৈরির উপকরণসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ ও ধ্বংস করা হয়। পাশাপাশি সিলগালা করা হয়েছে নকল ওষুধ তৈরির ওই কারখানা। তবে অভিযানের সময় কারখানার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড় নামক স্থানে ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নওশাদ হাসান।
জানা যায়, মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তুলেছিলেন নকল মৎস্য ওষুধ তৈরির কারখানা। সেখানে এভেটা, নাভারা, বাজাজ গ্রুপ, গ্ল্যাক্সো অ্যাগ্রোভেট কোম্পানির নাম ও মোড়ক ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন নকল মৎস্য ওষুধ তৈরির কাজ। ভুয়া ওষুধ তৈরি হলেও ছিল না কোনো যথাযত পদক্ষেপ।
মোস্তাফিজুর নওগাঁ সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড় সংলগ্ন সামসুদ্দিনের নর্থ বেঙ্গল গ্রেইন ইন্ডাস্ট্রিজ লি. অটো রাইস মিলের কাছে মেইন রোড সংলগ্ন একটি গোডাউন ঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাছের ওষুধ তৈরি করছিলেন। ছিল না কোনো সাইনবোর্ড, বাইরের গেটে তালা দিয়ে ভেতরে চলছিল এসব অপকর্ম। বাইরে থেকে দেখলে পরিত্যক্ত গোডাউন ছাড়া আর কিছু মনে হবে না।
গোডাউন ঘরের ভেতর শিশুসহ বেশ কয়েকজন কনটেইনার, বস্তার প্যাকেট থেকে ভিন্ন মেডিসিনের সংমিশ্রণ তৈরি করছেন। গ্যালাক্সো ক্লিন, গ্যালাক্সো ফাস্ট, গ্যালাক্সো অ্যাকুয়া, গ্যালাক্সো নিল, গ্যালাক্সো গ্রোথসহ নানান পণ্যের মোড়ক ও খালি সাদা বোতল রয়েছে। বড় বড় নীল রঙের কনটেইনার ও বিভিন্ন মেডিসিনের বস্তা থেকে ড্রামে ঢালা হচ্ছে এসব মেডিসিন তারপর মিশ্রন ভালোভাবে গুলিয়ে কাকের সাহায্যে ছোট ছোট বোতলে ঢেলে লেভেল লাগিয়ে তা বাজারে ছাড়া হচ্ছিল।
ফলে এসব ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করায় গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল আসল গ্যালাক্সো কোম্পানির বাজারজাত করা ওষুধের। দিন দিন নষ্ট হচ্ছিল তাদের সুনাম। অপরদিকে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন বিভিন্ন মৎস্য চাষিরা।
অন্যদিকে, বোতলের গায়ে গ্ল্যাক্সো অ্যাগ্রোভেট লি. ঢাকা, বাংলাদেশ কোম্পানির লেভেলিং করে বাজারজাত করছিলেন তারা। অথচ এ কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে গ্ল্যাক্সো অ্যাগ্রোভেট।
বিষয়টি গণমাধ্যমে জানাজানি হলে গ্যালাক্সো অ্যাগ্রোভেটের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. বায়েজিদ আলম, গ্ল্যাক্সো অ্যাগ্রোভেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম আহমেদ। সহযোগিতা করেন সদর থানার পুলিশ সদস্যরা।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নওশাদ হাসান বলেন, এখানে বিভিন্ন কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে অবৈধভাবে নকল মৎস্য ওষুধ তৈরি করছিল। যার সত্যতা পাওয়া যায়। নকল ওষুধ তৈরির বিভিন্ন উপকরণসহ অনেক মালামাল জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু মালামাল ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি সিলগালা করা হয়েছে নকল ওষুধ তৈরির কারখানা। তবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন গ্ল্যাক্সো অ্যাগ্রোভেট লি. কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম আহমেদ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে তারা নকল ওষুধ তৈরি করছিল। জানি না তারা কতদিন থেকে নকল ওষুধ তৈরির এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের কারণে আমাদের কোম্পানির সুনাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, ভিন্ন জায়গায় থেকে প্রোডাক্টের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ আসছিল। আমরা কোনো সমাধান পাচ্ছিলাম না। আজ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সেটার সমাধান হলো। তবে যারা এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন