

নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্কটি প্রায় দুই বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় বেহাল। শিশুদের বিনোদনের রাইডগুলো ভাঙাচোরা, নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। সন্ধ্যা গড়ালেই সাপ-পোকামাকড়ের আতঙ্কে থাকেন দর্শনার্থীরা। দ্রুত সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে পার্কটি আবারও বিনোদনের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তির মোড়ে শতবর্ষ আগে ২ দশমিক ৪৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত পার্কটি দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র জনবিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় প্রবীণ ও মধ্যবয়সীরা হাঁটাহাঁটি করতে আসেন এখানে। বিকেলে উন্মুক্ত থাকে সবার জন্য। ছুটির দিনে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সববয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পার্কটি।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিন দেখা গেছে, পার্কের শিশুদের রাইডগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ৩টি ঢেঁকির সবই ভাঙা, অধিকাংশ দোলনা অচল, দুটি স্লিপার থাকলেও তাতে মরিচা ধরেছে। যে কোনো সময় সেগুলো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দোলনার নিচে গর্ত হয়ে বৃষ্টির পানি জমে থাকে, ফলে শিশুরা কাদা-ময়লায় নোংরা হয়ে যায়। এসব কারণে শিশুদের বিনোদন ব্যাহত হচ্ছে। তা ছাড়া মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
গত দুই বছর ধরে পার্কের বাল্বগুলো নষ্ট থাকায় সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা অন্ধকার নেমে আসে। এতে হাঁটতে গিয়ে প্রবীণদের প্রায়ই বিপদে পড়তে হয়। অনেকেই সাপ-পোকামাকড়ের ভয়ে সন্ধ্যার পর পার্কে প্রবেশ করেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ পার্কটি যেন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পার্কের প্রধান ফটকের সামনে মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা হয়। ফুটপাতে ফাস্টফুডের দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের চলাচলে চরম ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। দর্শনার্থীরা এসব দোকান নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
উকিলপাড়ার গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বলেন, ছুটির দিনে বাচ্চারা পার্কে আসার জন্য জেদ করে। কিন্তু দোলনায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে, মইগুলো ভাঙা, স্লিপারেও মরিচা ধরেছে। বছরের পর বছর এমন অবস্থায় রয়েছে। কেউ যেন দেখার নেই। আমাদের দাবি দ্রুত পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
সংগীত ব্যক্তিত্ব খাদেমুল ইসলাম বলেন, পার্কটি জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হলেও কোনো ধরনের উন্নয়ন নেই। রাইডগুলো নষ্ট, পুকুরের পাড় ভাঙছে, পানি অপরিষ্কার, ফুলের গাছ নেই। যে পরিবেশে মানুষ বিনোদন পাবে, তার কিছুই নেই।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে আসা সুমন চৌধুরী বলেন, বছরের পর বছর পার্কে কোনো আলো নেই। অন্ধকারে কয়েকবার সাপের মুখোমুখি পড়েছি। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এসএম জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, গত তিন বছরে ওয়াকওয়ে ও কিছু রাইডের কাজ করা হয়েছে। তবে শিশুদের রাইডগুলো বেশি ব্যবহারের কারণে দ্রুত নষ্ট হয়েছে। দোলনার নিচে ফুট টাইলস বসানোসহ আরও কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনায় রয়েছে। পার্কটি দ্রুত সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধান গেটের সামনে দোকান ও মোটরসাইকেল রাখার বিষয়টি নজরদারিতে রাখা হবে, যাতে দর্শনার্থীদের স্বাভাবিক চলাচলে আর সমস্যা না হয়।
মন্তব্য করুন