ভারতের সিকিম ও পাহাড়ি অঞ্চলে টানা ভারি বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
রোববার (৩ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা ৫২.১৫ মিটার অতিক্রম করে ৫২.২০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। ব্যারাজ এলাকায় স্বাভাবিক পানির বিপৎসীমা ৫২.১৫ মিটার। গত শনিবার পানির উচ্চতা ছিল ৫১.৮০ মিটার, যা বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ ঘণ্টায় নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করল। সর্বশেষ ২৯ জুলাই রাতেও পানি ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
তিস্তা ব্যারাজের পানি পরিমাপক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, রোববার ভোরে হঠাৎ পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। পানির চাপ সামলাতে ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ডালিয়া পাউবো জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে সোমবার দুপুর নাগাদ পানি কিছুটা কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ উজানে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে আগামীকাল আবারও ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে।
পানির এই বৃদ্ধির ফলে তিস্তা ব্যারাজের উজান ও ভাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখরিবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘর ও উঠানে। এতে অনেক কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং কৃষকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এখন উজান থেকে আসা পানির কারণে বাড়ির উঠানে পানি ঢুকে গেছে।
ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং স্থানীয় ভারি বর্ষণের ফলে এই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং জরুরি প্রয়োজনে ত্রাণ কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ত্রাণসামগ্রী ও তাঁবু মজুত রাখা হয়েছে।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা ও নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই প্রেক্ষাপটে বহু প্রতীক্ষিত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি আরও জোরালোভাবে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে তিস্তা তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ কখনোই শেষ হবে না।
এদিকে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক চরাঞ্চলের সড়ক তলিয়ে গেছে এবং বিভিন্ন গ্রামের সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে, যা কৃষিক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
মন্তব্য করুন