ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে ধর্মপুর, কেয়াইর এবং খাড়েরা দারোগা বাড়ির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী জিয়া খাল একসময় ছিল কৃষকদের জীবনরেখা। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সিএন্ডবি খালের সঙ্গে মিশে কুটি চৌমুহনী হয়ে বিজনা নদী ও বুড়ি নদীতে সংযুক্ত হওয়া এই খাল শুধু পানি নিষ্কাশনের পথ নয়— এটি শতশত একর কৃষিজমির সেচ ব্যবস্থারও প্রধান উৎস ছিল।
কিন্তু এখন এই খালের বিভিন্ন অংশ প্রভাবশালী মহলের অবৈধ দখলে চলে গেছে। কোথাও গড়ে তোলা হয়েছে বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবার কোথাও বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখা হয়েছে। ফলে বর্ষার মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে হাজারো একর কৃষি জমি দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকে।
কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, এখন আমন ধান লাগানোর সময়। কিন্তু জমি এখনো পানিতে ডুবে আছে। আগের মতো খাল দিয়ে পানি বের হতে পারলে আমরা ধান রোপণ শুরু করতাম। বর্ষায় এই অবস্থা প্রতি বছরই হয়।
আরেক কৃষক রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে এই খালের পানি দিয়ে সেচ দিতাম, এখন বৃষ্টির পানি জমেই বন্যা হয়ে যায়। চাষাবাদ তো হয়ই না, উল্টো ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
শুধু কৃষি নয়, খাল দখল স্থানীয় পরিবেশ ও জনজীবনকেও বিপর্যস্ত করছে। বর্ষায় পানি জমে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়, ছোট বাচ্চারা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। স্থানীয়দের মতে, খালটি উন্মুক্ত করে দিলে পানি চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, তারা বহুবার লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। প্রশাসন থেকে অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো উচ্ছেদ অভিযান হয়নি। ফলে দখলদাররা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, খাল উন্মুক্ত না করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। নদী-খাল দখল মুক্ত রাখা শুধু কৃষি নয়, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় অর্থনীতির জন্যও অপরিহার্য।
কসবাবাসীর দাবি একটাই— জিয়া খাল দ্রুত অবৈধ দখলমুক্ত করে পানি চলাচলের পথ সচল করা হোক। এটি কেবল একটি খাল দখলের ঘটনা নয়, এটি মানুষের জীবিকা, পরিবেশ ও নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বিষয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছামিউল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, জিয়া খাল কসবা উপজেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জলপথ। এটি শুধু কৃষি সেচ ব্যবস্থার জন্য নয়, বর্ষার পানি নিষ্কাশন এবং আশপাশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। খাল দখল করে পানি চলাচল বন্ধ করা একটি গুরুতর অপরাধ। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করেছি এবং নোটিশ প্রদান করেছি। খুব শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন