সিলেটের অন্যতম পর্যটনসহ কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথরে পাথর লুটপাট শেষে এবার ঘুম ভেঙেছে সবার। জেলা প্রশাসন, দুদক, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজে টনক নড়েছে। অন্যদিকে আন্দোলনে নেমেছেন পরিবেশবাদীরাও। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে পাথর উদ্ধার করে আগের রূপে ফেরানোর চেষ্টা করছে সাদা পাথর।
ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৫ হাজার টন এবং ১৩০ গাড়ি সাদা পাথর উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরায় সিলেটের লুট হওয়া সাদাপাথর পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
এরআগে, গত ১২ আগস্ট রাতে দৈনিক কালবেলায় সিলেট থেকে শতশত ট্রাকে করে সাদা পাথর সরিয়ে নেয়ার ভিডিও প্রকাশিত হয়। ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সমালোচনার মুখে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। সেদিনই দুপুরে অভিযানে যায় দুদক। এরপর রাতেই জেলাপ্রশাসক জরুরি সভা করে পাথর লুট বন্ধ ও লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে তৎপর হয়।
কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে কালবেলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টেলিভিশনে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচার হলেও এর প্রতিকারে কারো কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
জেলা প্রশাসকের সাদাপাথর পরিদর্শন : বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটন স্পট সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সাদা পাথর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে যে লুটপাট হয়েছে, তা রোধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যারা এই অবৈধ কাজে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি শিগরিই সময়ের মধ্যে যেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল সেগুলোকে পুনরুদ্ধার করে এখানে আবার প্রতিস্থাপন করতে পারব। এটা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয় আমরা সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া এখানের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে সেই ক্ষতি যেন আর কেউ করতে না পারে এবং যারা এই কাজে জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তারসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিব এবং আইন যেভাবে আমাদের পারমিট করে সেভাবে আমরা তাদেরকে ধ্বংস করাসহ অন্যান্য যে প্রক্রিয়া আছে সেগুলো আমরা করব।
পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সাদা পাথরে আসুন। এখানকার পরিবেশ এখনো পর্যটনবান্ধব।’
লুট হওয়া ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ, ফেলা হচ্ছে সাদা পাথরে : বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেটে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালিয়ে এসব পাথর জব্দ করা হয়েছে। পরে এসব পাথর ভোলাগঞ্জ থেকে নৌকায় করে সাদা পাথরে ফেলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ঘাট থেকে ১৫টি নৌকায় করে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে ফেলা হচ্ছিল।
জেলা প্রশাসন বলছে, রুট করা সব পাথর উদ্ধার করে সাদা পাথরে প্রতিস্থাপন করা হবে। অভিযানে প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এগুলো সাদাপাথর ও জাফলং এলাকার নদীতে ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এর আগে, বুধবার (১৩ আগস্ট) সাদা পাথর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এগুলো রাতে সাদা পাথরে পুনঃস্থাপন করা হয় বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার।
জাফলংয়ে দুই হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার : সিলেটের জাফলংয়ে জিরো পয়েন্টে পাথর চুরি ও লুটপাট বন্ধ করতে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। এসময় ২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী।
ইউএনও রতন কুমার অধিকারী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে কিছু দুষ্কৃতকারী রাতের আধারে কিছু পাথর সরিয়ে ফেলছিল। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নেই। এরপর থেকে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ-বিজিবির টহল অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখান থেকে যে পাথরগুলো সরানো হয়েছে আমরা সেখান থেকে খুঁজে বের করে প্রায় দুই হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছি।
মন্তব্য করুন