সিলেটে চুরি ও লুট হওয়া সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানে রাস্তায় আটকে দেওয়া হয়েছে ১৩০টি পাথরবোঝাই ট্রাক।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে সিলেট ভোলাগঞ্জ সড়কের সিলেট ক্লাবের সম্মুখে যৌথবাহিনী চেকপোস্ট বসিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদা পাথর এলাকা থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের অভিযান জোরদার হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা পাথরগুলো পুনরায় নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চুরি হওয়া পাথর ফেরত না আসা পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে। চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সাদা পাথর থেকে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান ও চেক পোস্ট করেছি। যারা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সিলেট ক্লাবের সম্মুখে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। অপরাধ বন্ধ করতে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
এর আগে, কালবেলায় ‘রাতের আঁধারে শত শত ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সাদা পাথর’ শিরোনামে মাল্টিমিডিয়া ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর সিলেটের সাদা পাথর পর্যটন স্পটে অভিযান পরিচালনা করে দুদক টিম। সাদা পাথরে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পরিদর্শনে আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেটের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে অভিযানে আসা উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাত গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এ ধরনের লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসন ও খনিজ খনিজ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী, এসব পর্যটন খাতের ক্ষতির সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কিনা, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুদক সূত্র জানায়, কয়েক শত কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ লুটের ঘটনায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জড়িতদের শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা দীর্ঘদিন থেকে অভিযোগ করে আসছেন প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই লুটপাট অব্যাহত রয়েছে, যা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, পর্যটন শিল্পকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর সিলেট জেলার ৮টি পাথরকোয়ারি ও কোয়ারিবহির্ভূত ১০টি এলাকা থেকে পাথর লুটপাট শুরু হয়। বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা, ভোলাগঞ্জ পাথরকোয়ারি ও সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা এবং গোয়াইনঘাটের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং ও পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দি থেকে গণহারে পাথর লুট হয়। সম্প্রতি দেশবিদেশে সুপরিচিত পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথরের অন্তত ৮০ শতাংশ পাথর সাবাড় হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। প্রশাসন এখন লুট হওয়া পাথর জব্দে ও লুটপাট ঠেকাতে তৎপর হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাদা পাথরসহ সিলেটের অন্যান্য জায়গা থেকে পাথর লুট বন্ধে করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার (১৩ আগস্ট) বৈঠক হয়। বৈঠক থেকে সর্বসম্মতিতে ৫টি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো হলো- জাফলং ইসিএ এলাকা ও সাদা পাথর এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে; গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে যৌথ বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে; পাথর ভাঙার অবৈধ যন্ত্রের বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্নসহ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের অভিযান চলবে; পাথর চুরির সঙ্গে জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে ও চুরি হওয়া পাথর উদ্ধার করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা কালবেলাকে বলেন, চুরি ও লুট হওয়া সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথবাহিনীর বিশেষ অভিযানে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ ও ১৩০টি ট্রাক করা হয়েছে। চুরি হওয়া পাথর ফেরাতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন