রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১১ এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া আকবরের কাণ্ড

কৃষক আত্মহত্যার খবরে এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি : কালবেলা
কৃষক আত্মহত্যার খবরে এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি : কালবেলা

রাজশাহীর মোহনপুরে ঋণের চাপে আকবর হোসেন (৫০) নামে এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোরে উপজেলার খাড়ইল গ্রামে ওই কৃষকের নিজের পানবরজে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কৃষক আকবর হোসেন খাড়ইল গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। পানের চাষ করেই চলতো তার সংসার।

স্থানীয়রা জানান, পানের চাষ করেই চলতো আকবর হোসেনের সংসার। কিন্তু এ বছর পান বিক্রি করে আয় হয়নি, বাজারে দাম পড়ে গেছে। অথচ মাথার ওপর ছিল ১১টি এনজিও ও স্থানীয় সুদ কারবারিদের অন্তহীন চাপ। প্রায় ৬-৭ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সোমবার সকালে তিনি নিজের পানবরজে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

জানা গেছে, আকবর হোসেনের ঋণ ছিল ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ভার্ক, ডিএফইডি, শাপলা গ্রাম উন্নয়ন সংস্থা, রিক, ইএসডিও, গ্রামীণ প্রচেষ্টা, পল্লী মঙ্গল কর্মসূচি (পিএমকে) এবং গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র (গাক) নামের অন্তত ১১টি এনজিওতে। পরিবারের দাবি, ঋণের বোঝা আর অপমান সইতে না পেরেই তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

নিহতের ছেলে সুজন শাহ (৩০) বলেন, ‘বাবা অন্তত ৪ লাখ টাকা এনজিও থেকে নিয়েছিলেন। বাকি ছিল সুদের টাকার বোঝা। প্রতি সপ্তাহেই ৫ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হতো। কিন্তু এবার পানের কোনো দাম নাই। এক বিঘা জমির পান বরজের আয়ে সংসার চলতো। এনজিওর লোকেরা প্রতিদিন এসে চাপ দিত, কিস্তির টাকা চাইতো। বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ঋণের চাপে বাবাকে মরতে হলো।’

স্থানীয়রা আরও জানান, সকালে খবর ছড়িয়ে পড়তেই আকবর হোসেনের বাড়িতে ভিড় জমে যায়। সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক আর বেদনার ছাপ। অনেকে বলছেন, এনজিওর কিস্তির চাপ গ্রামীণ দরিদ্র মানুষকে প্রতিদিনই শোষণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কৃষকরা জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন, কিন্তু বাজারে ন্যায্য দাম না পেয়ে একের পর এক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, আকবর হোসেন কৃষক মানুষ ছিলেন। এ বছর পান চাষে লোকসান হয়েছে। ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে হতাশা থেকেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

তবে আকবর হোসেনের পরিবার ময়নাতদন্তে রাজি নয়। তারাও মামলা করতে চাইছেন না। ওসি বলেন, ‘যদি পরিবার এনজিওর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করে, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দিবাগত জেলার পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে মিনারুল নামের এক ব্যক্তি ‘ঋণের চাপ ও খাবারের অভাবে’ স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে এসব মৃত্যু আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—অযৌক্তিক ঋণের চাপ, কৃষিপণ্যের দাম না পাওয়া এবং গ্রামীণ অর্থনীতির অস্থিরতা কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গরুর মাংসে হাড়-চর্বি বেশি দেওয়ায় সংঘর্ষ

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

‘জনগণের অধিকার ও মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিএনপি’

নিউইয়র্কের প্রবাসীদের এনআইডি কার্যক্রমের উদ্বোধন

কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

ফের জামায়াতের সমালোচনা করলেন হেফাজত আমির

জবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা হাসিবুলের প্রথম জানাজা সম্পন্ন

১০

গণতন্ত্রে উত্তরণে বিশ্বের সমর্থন পাওয়া গেছে : মির্জা ফখরুল

১১

আমরা পা ছেড়ে মাথার রগে ফোকাস করছি, মজার ছলে সর্ব মিত্র

১২

নাটকীয় ম্যাচ জিতে টাইগারদের সিরিজ জয়

১৩

জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যুতে হাসপাতালে ভিপি সাদিক কায়েম

১৪

হঠাৎ খিঁচুনিতে জবি ছাত্রদল নেতার মৃত্যু

১৫

আবারও ইনজুরিতে ইয়ামাল

১৬

ঈদগাহের নামকরণ নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

১৭

খুলনায় ছেলের হাতে বাবা খুন

১৮

চাকসু নির্বাচন / ১৫ সেকেন্ডে দিতে হবে ১ ভোট

১৯

‘ভোটের অধিকার না থাকায় শ্রমজীবীরা বেশি অমর্যাদার শিকার’

২০
X