মাত্র ৯ মাস আগে সংস্কার করা হয়েছিল। অথচ তার ৬ মাসের মধ্যেই বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের রাজ হালট সড়ক। দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি এখন খানাখন্দে ভরা এক বিপজ্জনক পথ।
এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন চলাচল করেন অন্তত ১৫ গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। তাদের যাতায়াত, চিকিৎসা, কৃষিপণ্য পরিবহন ও শিক্ষাক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
সড়কটি বালুচর ইউনিয়নের বেগমবাজার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গিয়ে মিশেছে। এটি চর পানিয়া, চান্দের চর, খাসকান্দি, চরখাসিকান্দি, চরেরগাঁসহ অন্তত ১৫টি গ্রামের মানুষের জন্য উপজেলা সদর ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ। বহু বছর ধরে রাস্তাটি ভালোভাবে সংস্কারের অভাবে ক্ষয়ে গেলেও দুই একবার সংস্কার হয়ে তাও যৎসামান্য।
যার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে যায় পানি, তৈরি হয় কাদা ও পিচ্ছিলতা। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গাড়ি চলাচল প্রায় অচল হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গতবার যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই রাস্তার সংস্কারের কাজ পেয়েছিল, তারা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে। যার ফলে মাত্র ছয় মাসেই রাস্তাটি ধসে পড়েছে। বর্তমানে রাস্তায় বড় বড় গর্তের কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। একাধিক মোটরসাইকেল, ভ্যান ও অটোরিকশা উলটে আহত হয়েছেন অনেক যাত্রী ও চালক। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। মৌসুমি সবজি, ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন হয় এই এলাকায়। এসব পণ্য রাজধানীর শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী ও কারওয়ান বাজারে নিয়ে বিক্রি করে জীবিকা চালান কৃষকরা। কিন্তু এই রাস্তার কারণে সময়মতো পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। অনেক সময় পচে যাচ্ছে ফসল, কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বাজারে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, রাস্তার এমন অবস্থা যে, ভ্যানে করে শাক-সবজি নিয়ে বের হলে মাঝেমধ্যেই উল্টে যায়। অনেক সময় পণ্য পচে যায়, কখনো সময়মতো বাজারে পৌঁছাতেই পারি না।
বালুচর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওয়াসিম আহমেদ বলেন, এই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, উপজেলার অত্যন্ত জনবহুল এলাকার মানুষ এই রাস্তায় যাতায়াত করেন। মাত্র কয়েক মাস আগে রাস্তাটি সংস্কার করা হলেও ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে রাস্তাটি এখন অচল অবস্থা। ১ কোটি ১৯ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দে আফাজুদ্দিন এন্টারপ্রাইজ রাস্তাটি ঠিকাদারের দায়িত্ব ছিলেন। রাস্তাটি সংস্কারের সময় তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে বালুচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি আওলাদ হোসেন বলেন, রাস্তাটি নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হয়েছে।
সিরাজদিখান উপজেলার প্রকৌশলী মো. আসিফ উল্লাহ বলেন, রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। যে ঠিকাদার রাস্তাটি মেরামত করেছিল তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মাত্র কয়েক মাস আগে রাস্তাটি মেরামত করায় তাৎক্ষণিক এই রাস্তার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বর্ষা মৌসুম শেষ হলে যেভাবেই পারি একটু সংস্কার করার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন