বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদসহ কেন্দ্র ঘোষিত ৪ দফা দাবিতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটি ঘোষণা করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও লাইনম্যানরা কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান। এতে জেলার ৬ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক সেবায় শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার সনৎ কুমার ঘোষ জানান, তাদের অধীনে ২২৭ জন লাইনম্যান রয়েছেন। এর মধ্যে সদর দপ্তরে ১৮ জন থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২-৩ জনকে পাওয়া যাচ্ছে। কারও ছুটির আবেদন জমা হয়নি।
তিনি বলেন, গণছুটির মতো কর্মসূচি রাষ্ট্রবিরোধী। এই সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। সাতক্ষীরায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ৬ লাখ ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সেনা ক্যাম্পকে জানানো হয়েছে।
একইদিন সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম সাধন কুমার দাস। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা গ্রাহকদের জন্য নিম্নমানের মালামাল ক্রয় করে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছেন। এর ফলে গত দুই মাসে সাতজন লাইন ক্রু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। গত এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জন লাইন ক্রু ও অন্যান্য পদে ৩০ জনের বেশি।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্নীতির প্রতিবাদে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় সারাদেশে শতাধিক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত, সাময়িক বরখাস্ত, মামলা ও কারাভোগ করতে হয়েছে। শুধু সাতক্ষীরাতেই আগস্ট মাসে এক জেনারেল ম্যানেজারসহ একাধিক কর্মকর্তাকে অনৈতিকভাবে বরখাস্ত বা বদলি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অবৈধ বরখাস্তের প্রতিবাদে ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিকেল ৫টা থেকে গণছুটি শুরু করেছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গ্রাহক সেবা বিঘ্নিত হলে তার দায়ভার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও জেনারেল ম্যানেজারকে বহন করতে হবে।
কর্মচারীদের গণছুটি ঘোষণায় গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ঝড়-বৃষ্টির সময় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে কিংবা লাইনে সমস্যা দেখা দিলে মেরামত কাজ তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব হবে না। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎ সংকটে পড়বেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার সাদিকুল ইসলাম, লাইনম্যান গ্রেড-২ সাইফুল ইসলাম, এলটি জাকির হোসেন, এমআরসিএজ মাহবুবুর রহমানসহ অসংখ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
মন্তব্য করুন