খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৭১৯ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব তহবিলে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে (স্থিতি) ৪৫৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এছাড়া রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৬৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ঘোষিত বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কেসিসির শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার এ বাজেট ঘোষণা করেন।
গত চার বছরে নতুন কোনো প্রকল্প না থাকা আর পুরাতন প্রকল্পগুলো চলতি বছর শেষ হওয়ার পথে থাকায় এবার বাজেটের আকার ছোট।
গত অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮১ কোটি ৯৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সংশোধিত আকারে তা দাঁড়িয়েছে ৬১৮ কোটি ২৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। নিজস্ব তহবিলের অর্জনের হার ৬৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং উন্নয়ন তহবিলের অর্জনের হার ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
মূলত দেশের অস্থিরতা ও আর্থিক দৈন্যতার কারণে এবং সরকারের নিকট থেকে আশানুরূপ বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে বাজেটের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
ঘোষিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী বাজেট আখ্যায়িত করে কেসিসির পরিচালক ফিরোজ সরকার বলেন, এ বাজেটে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাজেটে স্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বাজেটে নতুন কোনো কর আরোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য করে নিজস্ব আয়ের সম্প্রসারণ যেমন- মার্কেট, দোকান, নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও সিটি করপোরেশনের আধুনিকায়ন করা হবে।
কেসিসি পরিচালক বলেন, এ বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাজেটে নাগরিক জীবন-মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পার্ক, বাজার, ধর্মীয় উপাসনালয় ও কেসিসির বিভিন্ন দপ্তর আধুনিয়কায়নের কাজ চলমান রয়েছে। বাজেটে ডেঙ্গু মোকাবিলায় মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও নগরবাসীকে সচেতনকরণসসহ মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে, তা মোকাবিলায় অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ বস্তি এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা এ বাজেটে রয়েছে। এছাড়া এ বাজেটে আগস্ট-২০২৪ ও তার পূর্বে শহীদদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাজেটের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, কেসিসির নিয়মিত ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিজনিত কারণে করপোরেশনের সংস্থাপন ব্যয় প্রতি বছরই বাড়ছে। নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে এবং ব্যয় সংকোচন করে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য রাজস্ব খাত থেকে এ বাজেটে ১১৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এরমধ্যে অবকাঠামো তৈরি, সড়কবাতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, ভেটেরিনারি ও কনজারভেন্সিসহ উন্নয়ন খাতে ১০০ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজার টাকা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং মূলধন খাতে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণাকালে চব্বিশের শহীদ শেখ মো. সাকিব রায়হানের পিতা শেখ আজিজুর রহমান ও মাতা নুরুন্নাহার বেগম, সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান মনি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান, বাজেট অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, চিফ প্ল্যানিং অফিসার (চলতি দায়িত্বে) আবির উল জব্বার, প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান, বাজেট কাম অ্যাকাউন্ট অফিসার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
মন্তব্য করুন