চার দিনের অবরোধের পর স্বস্তি ফিরতে শুরু করছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। অবরোধ স্থগিতের পর বুধবার (০১ অক্টোবর) সকাল থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাটও।
তবে এখনো খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও খাগড়াছড়ি পৌরসভা এবং গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হলে ধাপে ধাপে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করে অবরোধকারী জুম্ম ছাত্র-জনতা।
অবরোধ স্থগিতের পর খাগড়াছড়ি-ঢাকা, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিসহ বিভিন্ন দুরপাল্লার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অনেকেই দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরছে। আর যারা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকে পড়েছে তারাও নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছেন। সবার মধ্যেই এক ধরনের স্বস্তি দেখা গেছে।
১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও চার দিন পর খুলেছে দোকানপাট। শহরে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে শহরের পরিবেশ। গত কয়েক দিনের উত্তেজনা ও সহিংসতায় সাধারণ মানুষের মনে যে ভয় আর উৎকণ্ঠা কাজ করছিল, তা কমতে শুরু করেছে।
১৪৪ ধারা জারি থাকায় খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ টহল অব্যাহত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশপথে বসানো চেকপোস্টে বরাবরের মতোই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাসান মারুফ বলেন, ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও শারদীয় দুর্গোৎসবের কারণে আমরা মানুষের যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করছি না। পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিগগিরই ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হতে পারে।
খাগড়াছড়ি গুইমারা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে রোববার খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারার মধ্যেই দুষ্কৃতকারীদের হামলায় ৩ পাহাড়ি যুব নিহত হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় মারমা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে গেল রোববার গুইমারা সহিংসতার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে গুইমারায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
উল্লেখ্য, গেল মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে (১৯) আটক করে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মন্তব্য করুন