ঢাকার ধামরাইয়ের আলাদীনস জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে চারজনকে সিজারের কাঁচি দিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার জয়পুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকার আলাদীনস জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনাটি ঘটে।
আহতরা হলেন— মো. মানিক মিয়ার ছেলে মো. হাসিব (২০), মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সুজন আহমেদ (২৮), ফরহাদ হোসেনের ছেলে মো. ইসরাফিল (২২) ও মো. জানিফ আলীর ছেলে মো. ইউসুফ আলী (২১)। আহতরা ধামরাই উপজেলার কেলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্থানীয়রা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জয়পুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আলাল নামে এক রিকশাচালককে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় আলাদীনস জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার আল আমিন চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন স্থানীয়দের সঙ্গে ডিউটি ডাক্তারের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এ সময় খবর পেয়ে চিহ্নিত আওয়ামী লীগের দোসর সুজনসহ কয়েকজন যুবক ছুটে আসে হাসপাতালে। সুজন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা এসে স্থানীয়দের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। একপর্যায়ে সুজনের সহায়তায় ডাক্তার আলামিন স্থানীয় ৪ যুবককে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভুক্তভোগী সুজন বলেন, এক অটোরিকশাচালককে কে যেন অচেতন ওষুধ খাইয়ে অটো ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আমরা দেখি অটো রিকশাচালক আলাদীনস হাসপাতালের সামনে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। পরে আমরা তাকে আলাদীনস হাসপাতালে নিয়ে যাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। তখন হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার আল আমিন বলে এই লোকের কোনো চিকিৎসা এখানে হবে না। এর কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। আমাদের রুলসে (নিয়ম) নেই এদের চিকিৎসা করার। মালিকের নির্দেশ আছে, আমরা এর কোনো চিকিৎসা করতে পারবো না।
সুজন বলেন, হাসপাতাল থেকে খালেকের ছেলে আওয়ামী লীগের দোসর সুজনকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসে। পরে সুজন কয়েকজন গুন্ডাপান্ডা নিয়ে এসে আমাদের ওপর আক্রমণাত্মক কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে সুজন ও স্টাফরা আমাদের পিছমোড়া করে ধরে ফেলে। তখন ডাক্তার সিজারের কাঁচি দিয়ে আমাদের আঘাত করে। পরে স্থানীয়রা আমাদের আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে থেকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রেফার্ড করলে আমরা সাভার এনাম মেডিকেলে ভর্তি হই।
ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুর আল মুর্শেদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ছুরিকাঘাতে আহত চারজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসিব নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাকে ঢাকা রেফার্ড করা হয়েছে।
আহত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নিয়ম নেই এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, হাসপাতাল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সব রোগীকে চিকিৎসা দিবে। এমন কর্মকাণ্ডে কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেন তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করে আমরা ব্যবস্থা নিব।
রোগীকে চিকিৎসা না দেওয়া এবং ডাক্তারের ছুরিকাঘাতে ৪ যুবক আহতের বিষয়ে আলাদীনস জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কোনো সাক্ষাৎ দিবেন না বলে জানান।
তবে অভিযুক্ত ডা. আল আমিন কালবেলাকে জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো আননোন পয়জনিং (অজ্ঞাত বিষক্রিয়া) সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয় না। তারপরও আমি হাসপাতালের মালিক মেহজাবিন প্রিয়াংকাকে কল করি। রোগী ভর্তি রাখবো কিনা জানতে চাইলে তিনি না করে দেন। তাই আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে আমার ওপর হামলা করে। আমি কাউকে আঘাত করিনি।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আলাদীনস জেনারেল হাসপাতালে মারামারির বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন