

নিজের নামে এক খণ্ড জমিও নেই। পরের জায়গা পরের জমিতে টিনের বেড়া তুলে মাত্র ১০ ফিট লম্বা ও ৮ ফিট চওড়া ঘরেই তার ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌরশহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিহারপুর মহল্লার দিনমজুর নূর ইসলাম।
জানা গেছে, ২৮ বছর ধরে নূর ইসলামের বসতঘরে বিদ্যুতের আলোও জ্বলত না। অবশেষে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার সহযোগিতায় নূর ইসলাম তার ঘরে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ পেয়েছেন। শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে প্রথমবারের মতো ঘরটিতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে। এতে খুশিতে হাসি ফুটেছে নূর ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের মনে।
দিনমজুর নূর ইসলামের বয়স ৬৭ বছর। তার দুই ছেল ও দুই মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের সবার বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে রব্বানী একটি দুর্ঘটনায় দুটি পা হারিয়েছেন। ছোট ছেলে রব্বানী তার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। নূর ইসলাম তার স্ত্রী, ছোট ছেলে রব্বানী, ছেলের বউ ও দুই নাতিকে নিয়ে একই ঘরে বসবাস করেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নূর ইসলামের আদি বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। প্রায় তিন দশক আগে জীবিকার সন্ধানে তিনি আক্কেলপুরে এসে স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে বিহারপুর মহল্লার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে বাড়ির মালিক নিজে এসে সেখানে বসবাস শুরু করায় তাকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। প্রায় দশ বছর আগে একই মহল্লার বাসিন্দা নিহির দাস নিজের জায়গায় তাকে থাকতে দেন। সে জায়গাতেই নূর ইসলাম টিনের ছোট্ট ঘর তুলে পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সেই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাতে নূর ইসলামের ঘরে প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলেছে।
নূর ইসলামের দিনমজুরির আয়ে ও পরিবারের ছোট দোকানের সামান্য আয়ে ছয়জনের পরিবারটি টিকে আছে।
নূর ইসলাম জানান, সরকারি আবাসনে ঘর না পেয়ে দীর্ঘ দশ বছর ধরে বিহারপুর মহল্লার সনাতন ধর্মাবলম্বী নিহির দাসের দেওয়া জায়গায় টিনের ঘরে বসবাস করছি। বহু আগে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেও বিদ্যুৎ পাইনি। পরে এক রাতে মোমবাতি কিনতে গিয়ে জহুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তার সহায়তায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে আবেদন করলে অবশেষে বিদ্যুৎ সংযোগ পাই।
পাশের রাজকান্দা মহল্লার বাসিন্দা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, দিনমজুর নূর ইসলাম মোমবাতি আর কাঠুরা ইদ্রীস আলী কেরোসিন তেল কেনার সময় তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কথা জানতে পারি। ডিজিএমের সহযোগিতায় তাদের দুজনের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করেছি।
মন্তব্য করুন