

হঠাৎ করে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে চট্টগ্রাম শহরে। নগরজুড়ে তৈরি হয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ছিনতাই, চুরি কিংবা ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ২টার দিকে কোতোয়ালি থানার লালদীঘি এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে খুন হয়েছেন ইসমাইল হোসেন (৩৩) নামে এক যুবক।
ভুক্তভোগীদের অনেকেই পুলিশি হয়রানির আশঙ্কায় মামলা করতে চান না। যে কয়টি মামলা হয়েছে, তার বেশিরভাগেই অপরাধীদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিয়মিত অভিযান চলছে এবং অপরাধী চক্রকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তথ্যমতে, চলতি বছরের ১১ মাসে নগরের ১৬ থানায় মোট ৫১৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা ৯০টি। তবে নগরবাসীর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ বেশি।
পুরাতন রেলস্টেশন, নিউমার্কেট, সিআরবি, লালদীঘি, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, বাকলিয়া, বায়েজিদ, হালিশহর, ইপিজেড, মেরিনার্স রোড, নতুন ব্রিজ, টেকনিক্যাল ও সাগরপাড়া এলাকায় একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে জেলা পরিষদ মার্কেটের বিপরীত পাশ দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন ইসমাইল। সে সময় ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দুই সন্তানের জনক ইসমাইলের মৃত্যু জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। ঘটনাস্থলের পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আদালত ভবন ও সিএমপির নতুন সদর দপ্তর— এমন নিরাপত্তাবহুল এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটায় পুলিশের টহল ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তিন দুর্বৃত্ত ইসমাইলকে থামায়। ধস্তাধস্তির সময় তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রোববার দুপুরে নিউমার্কেট মোড়ে ছিনতাইয়ের আরেকটি ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুকিদুল বারী জয় বাসে করে আগ্রাবাদ যাচ্ছিলেন। যাত্রী কম থাকায় ১২-১৩ জনের একটি চক্র বাসে উঠে তার শরীরে ছুরি ঠেকিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
গত ২১ অক্টোবর বন্দর অফিসার্স কলোনি গেটে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে আইফোন ও টাকা ছিনতাই করা হয়। স্থানীয়রা দুজনকে ধরে পুলিশে দিলেও পেছনের চক্র অধরা।
৮ জুলাই বাকলিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে ডাকাতরা টাকা, স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এমনকি ফ্রিজ পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে সেই ফ্রিজে রাখা মাংস রান্না করে তারা নদীর পাড়ে খায়। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সাংবাদিক এবাদুল হক রিকশায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। চকবাজার থানায় জিডি করলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এক এসআই বলেন, ‘চোর ধরলেই তাদের গ্রুপ এসে আমাদের আক্রমণ করে। অনেককে ধরলেও জামিনে বের হয়ে আবার অপরাধে জড়ায়।’
সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আগের সরকারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তার নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে। নির্বাচনের আগে সহিংসতা ঠেকাতে পুলিশ ব্যস্ত থাকায় নিরাপত্তায় ফাঁক তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে সন্ত্রাসী চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
সিএমপির মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার আমিনুর রশিদ বলেন, ‘ছিনতাই ও সন্ত্রাস দমনে নিয়মিত অভিযান চলছে। ডিবি, থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ মাঠে রয়েছে। কঠোর হাতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
নগরবাসীর অভিযোগ, অভিযান বাড়লেও চোখে পড়ার মতো কোনো পরিবর্তন নেই। সাধারণ মানুষ মনে আতঙ্ক নিয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন।
মন্তব্য করুন