

রাজশাহীর তানোরের কয়েলের হাট মধ্যপাড়া এলাকায় শিশু সাজিদকে একনজর দেখতে মা রুনা বেগমের দীর্ঘ অপেক্ষা বেড়েই চলছে। মাত্র দুই বছরের ছোট্ট সাজিদ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে মায়ের পেছন পেছন হাঁটতেই হঠাৎ পরিত্যক্ত একটি টিউবওয়েলের গভীর গর্তে পড়ে যায়।
এরপর বিকেল, তারপর সন্ধ্যা। পরে রাত পেরিয়ে সকাল হলেও সাজিদকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরেও তাকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
সরেজমিন জানা গেছে, গর্তটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের চেষ্টায় মাত্র ৪০ ফুটের মতো গর্ত করা সম্ভব হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, শিশুটি যে গর্তে পড়েছে তার পাশে এস্কেভেটরের মাধ্যমে ৩০ ফুটের বেশি গভীর খনন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিম খনন করা গর্ত থেকে সেই গর্তে সুড়ঙ্গ করছে। নলকূপের জন্য খোঁড়া ওই গর্তের গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুট। এর ভেতরে যে কোনো জায়গায় শিশুটি আটকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কয়েক দফা চেষ্টায় নলকূপের ৩০ ফুট গর্তে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ক্যামেরা নামায়। কিন্তু উপর থেকে পড়া মাটি ও খড়ের কারণে শিশুটি তারা দেখতে পায়নি। তবে একই দিন দুপুরে শিশুটির কান্নার আওয়াজ শোনা যায়।
শিশুটির মা রুনা খাতুন জানান, বুধবার দুপুর ১টার দিকে মেজো ছেলে সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশের মাঠে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার ছোট একটি সন্তান কোলে ছিল। হাঁটার সময় হঠাৎ পেছন থেকে সাজিদ মা বলে ডেকে ওঠে। পেছনে তাকিয়ে দেখেন, ছেলে নেই, গর্তের ভেতর থেকে মা, মা বলে ডাকছে। গর্তটির উপরে খড় বিছানো ছিল। ওখানে যে গর্ত ছিল, সেটা বুঝতে পারেননি তিনি নিজে কিংবা ছেলেও। ওই জায়গায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে গর্তের ভেতর পড়ে যায়। লোকজন ডাকাডাকি করতে করতেই ছেলে গর্তের তলায় চলে যায়।
স্থানীয়রা জানান, এক বছর আগে জমির মালিক কছির উদ্দিন সেচের জন্য সেমিডিপ নলকূপ বসাতে গিয়ে এ গর্তটি খনন করেছিলেন; কিন্তু পানি না মেলায় কাজটি আর এগোয়নি। ফলস্বরূপ খোলা অবস্থাতেই রয়ে যায় বিপজ্জনক এ গর্তটি। গতকাল সেই অবহেলাই যেন প্রাণসংকটে ফেলেছে দুই বছরের নিষ্পাপ সাজিদকে। শিশুটির মা খড় তুলতে মাঠে গিয়েছিলেন। সে সময় খেলতে থাকা সাজিদ হঠাৎ গর্তে পড়ে যায়। প্রথমে স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করেও তাকে তুলতে পারেননি। খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে।
ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতার প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি সরানো ছাড়া শিশু সাজিদকে উদ্ধার সম্ভব হচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছোট্ট সাজিদকে উদ্ধারে এক্সক্যাভেটরের খোঁজ করা হচ্ছিল। কিন্তু উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন এক্সক্যাভেটর পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি পুরো তানোর উপজেলায় খোঁজ করেও কোনো এক্সক্যাভেটর পাওয়া যায়নি। অবশেষে রাত ৮টার দিকে পাশের উপজেলা মোহনপুর থেকে ছোট্ট দুটি এক্সক্যাভেটর এনে মাটি খননকাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
মন্তব্য করুন