২০ হাজার মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা নৌকা। বছরের পর বছর নৌকায় পার হচ্ছেন দ্বীপ গ্রাম খ্যাত যশোরের মণিরামপুরের খাজুরা বাঁওড় আর কপোতাক্ষ নদ ঘেরা পারখাজুরাবাসী।
গ্রামটি যেন রূপকথার কোনো সভ্য সমাজ ছাড়াই নির্বাসনের এক অচিনপুরী। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম নৌকা পারাপারেই জীবন পার করে দিয়েছেন। অদূরে দুই দিকে রাস্তা হওয়ায় গ্রামটির একাংশের মানুষের ভোগান্তি কমলেও বেশিভাগ মানুষের পারাপারের ভরসা একমাত্র নৌকা।
ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারপারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৌসুমি নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। অল্পের জন্য আরও ১০ জন প্রাণে রক্ষা পান। ঝাঁপা বাঁওড়ের ওপর নির্মিত ভাসমান সেতুর দেখাদেখি এ গ্রামের মানুষও তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অর্থাভাবে সেই কাজের অগ্রগতি থেমে আছে।
মন চাইলেও আর পাঁচটি গ্রামের মানুষের মতো সহসাই গ্রামের বাইরে যেতে পারেন না এখানে বসবাসরত মানুষরা। রোগগ্রস্ত মুমূর্ষু রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। গ্রামবাসীর আত্মীয়স্বজনও সচারচর আসেন না। কৃষকদের ক্ষেতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় যেতে হয়। অন্য যানবাহনে গেলে অনেক ঘুরতে হয়। তাছাড়া পরিবহন ভাড়া বেশি লাগে।
স্থানীয় আসলাম হোসেন, কাকলী আক্তার, রহিমা খাতুনসহ একাধিক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তাদের কলেজ যেতে নিয়মিত ঝুঁকি নিয়েই নৌকা পার হতে হয়।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার মুনসুর দলদার বলেন, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম এটি। দেশের মধ্যে এত বড় গ্রাম আছে কিনা তার জানা নেই। এমন গ্রামের লোকদের নিয়মিত ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করতে হয়।
মাঝি রব্বানি বলেন, প্রতিদিন প্রায় তিনশ থেকে পাঁচশ লোক পার হয়। পারাপারের বিনিময়ে টাকা ও বছর শেষে গৃহস্থের ফসল নেন।
স্কুলশিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রামটির উত্তর পাশে ঝাঁপা বাঁওড়, উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণ পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদ আর দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে উত্তর-পূর্ব কোণ পর্যন্ত খাজুরা বাঁওড় বিস্তৃত। বর্তমানে দুই দিক দিয়ে রাস্তা হলেও গ্রামটির সিংভাগ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়নি।
মন্তব্য করুন