ব্যারিস্টার আবু সায়েম
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিবেক জাগান

ব্যারিস্টার আবু সায়েম। ছবি : সংগৃহীত
ব্যারিস্টার আবু সায়েম। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়ের দাবি এবং মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো ক্রমেই অনাকাঙ্ক্ষিত কোলাহলে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে মূলধারার মিডিয়া পর্যন্ত- সর্বত্র যেন ব্যক্তি আক্রমণ, কটূক্তি আর বিদ্বেষের জয়জয়কার। এ বাস্তবতায় যখন কেউ একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিনির্ভর প্রশ্ন তোলে, তখন তা গা বাঁচানো বিদ্রুপ কিংবা অবজ্ঞার ঢেউয়ে ডুবে যায়।

আমরা ভুলে যাচ্ছি- রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য শুধু অর্থনীতির সূচকে মাপা যায় না, তা মাপা হয় ন্যায়বিচার, নাগরিক মর্যাদা ও মানবিক নিরাপত্তার মানদণ্ডে। সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, নিপীড়ন- এসব অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। অথচ ন্যায় প্রতিষ্ঠা কিংবা অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রায় অকার্যকর।

এ প্রেক্ষাপটেই আমি বলতে চাই, তারেক রহমানকে নিয়ে নোংরামো বাদ দিয়ে ১১ মাসে সংঘটিত রেকর্ডসংখ্যক খুন-ধর্ষণের ন্যায়বিচার কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, ভাবুন।

দেশে নৃশংস অপরাধ বাড়ছে, সরকার অপরাধ ঠেকাতে পারছে না- আপনারা যারা বিএনপিকে তুলোধোনা করছেন- এ নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করুন, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিরীক্ষণ করুন, সবার সাথে কথা বলুন। মানবাধিকার সুরক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের, এটা মাথায় নিয়ে আন্তরিকতার সাথে ও সরল বিশ্বাসে কাজ করুন। খালি খালি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত করবেন না। জানেন তো, ব্লেম গেম ন্যায় প্রতিষ্ঠার অন্তরায়।

তারেক রহমানকে গালি দিয়ে আপনি হয়তো বিকৃত সুখ লাভ করবেন, কিন্তু বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। আর যদি মনে করেন, দেশ গোল্লায় যাচ্ছে যাক, আপনি নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করবেন, তাহলে প্রকৃতি আবারও প্রতিশোধ নেবে। হাসিনা পালিয়েছে, আমরাও বাঁচব না।

সময় থাকলে তারেক রহমান কী বলেছেন, মন দিয়ে পড়ুন- রাষ্ট্রে যদি আইনের শাসন না থাকে, আপনি, আমি, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু- কেউ আমরা নিরাপদ নই।

বুঝতে পারলে আপনি, আমি, সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু- সবাই আমরা নিরাপদ থাকব। না বুঝতে পারলে বা বুঝেও না বোঝার ভান করলে, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে রাত পোহানোর আগে। কেঁদে-কেটেও তখন কেউ পার পাব না। সময় থাকতে তাই বিবেক জাগান।

আমার এ কথাগুলো কোনো প্রতিপক্ষকে হেয় করার জন্য নয়, বরং একটি আন্তরিক ও নীতিনিষ্ঠ আহ্বান- আমরা যেন বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি হই এবং সত্যকে চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজি। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমরা সবাই কি এক হতে পারি না?

আজ তারেক রহমানকে টার্গেট করে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেগুলোর ভাষা, ভঙ্গি ও কৌশল সবই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ব্যাহত করে। একজন রাজনৈতিক নেতাকে ব‍্যক্তিগতভাবে টার্গেট করে, কল্পিত অপবাদ দিয়ে তাকে হেয় করে আসলে কাদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে?

এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের নিজেদের মধ্যেই খুঁজতে হবে।

রাষ্ট্র যদি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে, যদি বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করে, যদি প্রশ্ন তোলাকে দেশদ্রোহিতা আর সমালোচনাকে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করা হয়- তাহলে সেটি আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, বরং একটি শোষণমূলক নিয়ন্ত্রিত কাঠামোতে রূপ নেয়। আমরা কি সেদিকেই হাঁটছি?

আজ যারা অন্যের গায়ে কাদা ছিটিয়ে আত্মতৃপ্ত হচ্ছেন, কাল হয়তো তারাও সেই একই শোষণের শিকার হবেন। ইতিহাস এ কথা বহুবার প্রমাণ করেছে- ফ্যাসিবাদ যখন ফিরে আসে, সে কারও কথা শোনে না, কাউকে ছাড় দেয় না।

তাই সময় থাকতে- আসুন, আমরা বিবেক জাগাই। রাজনীতিকে শত্রুতা নয়, দায়িত্ব ও নৈতিকতার জায়গা থেকে দেখি। মানবাধিকারের প্রশ্নে দলীয় নয়, মানবিক ও জাতীয় অবস্থান নিই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও সংবাদমাধ্যম- সবাই একসাথে কাজ করি।

তাহলেই আমরা একটি নিরাপদ, ন্যায়নিষ্ঠ ও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে পারি।

গালাগাল নয়, গঠনমূলক সমালোচনা করুন। প্রচার নয়, প্রশ্ন করুন। ব্লেম গেম নয়, সমাধান ভাবুন। আর দেরি নয়- বিবেক জাগান।

লেখক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ও সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের মাটিতেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে চান সাকিব

মধ্যরাতে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তসহ আরও যা আছে নতুন এমপিও নীতিমালায়

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে : বুলবুল

সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া আমাদের মৌলিক অধিকার : মাসুদুজ্জামান

‎জকসু নির্বাচন / প্রার্থীদের ডোপটেস্ট আগামী ৯ ও ১০ ডিসেম্বর

ডিসেম্বরের ৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার 

সালমান এফ রহমানসহ ৬ জনের ‎বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলা

ডা. আসিবুলের বেতন বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না : আদালত

আইজিপির অপসারণ ও বিচার চাইলেন পিন্টুর স্ত্রী

১০

নিবন্ধনহীন নারী রাষ্ট্রের চোখে অদৃশ্য : নারীর অধিকার সুরক্ষায় শতভাগ নিবন্ধন জরুরি

১১

চট্টগ্রামে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বাড়িতে ব্যারিস্টার মীর হেলাল

১২

কালবেলার অনুসন্ধানে ধরা হানিট্র্যাপ চক্র, আটক ২

১৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ নেতাকে শোকজ

১৪

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার : টিআইবি

১৫

‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে’

১৬

আরএমপির ১২ থানায় ওসি পদে রদবদল

১৭

রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন নিয়ে অসন্তোষ

১৮

খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য আইইবিতে দোয়া মাহফিল

১৯

৩২ হাজার সহকারী শিক্ষককে দুঃসংবাদ দিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

২০
X