দিনাজপুরের খানসামার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের ভুল্লির বাজারের ভুল্লির নদীর ওপর সেতুটির দুই পাশের রাস্তা ভেঙে যায় ২০১৭ সালে। এরপর ঝুলন্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এতে সদর উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় খোকশাবাড়ী ইউনিয়নবাসীর।
সেই থেকে প্রতি বছর ইউনিয়নের বাসিন্দারা ভাঙা সেতুর পাশে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করে আসছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ হেঁটে ও ভ্যান, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল নিয়ে সাঁকো পার হচ্ছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য বলছে, ভুল্লি নদীটি পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে বয়ে চলা করতোয়া নদীর একটি শাখা। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের কাছাকাছি জায়গা থেকে এর উৎপত্তি। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে নদীটি পূর্বতীরে নীলফামারী জেলার খোকশাবাড়ী ও পশ্চিম তীরে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পূর্ব বাসুলী গ্রাম অতিক্রম করে ২ জেলাকে বিভক্ত করেছে।
প্রায় দেড় বছর আগে বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে মোটরসাইকেলসহ পারাপারের সময় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান একজন। নদীর ওপর ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি মূলত নীলফামারী সদর ও খানসামা উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চলাচলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, বন্যায় ছয় বছর আগে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর চলাচলের জন্য স্থানীয়রা চাঁদা তুলে নির্মাণ করে এ বাঁশের সাঁকো। এ সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ছোট্ট সাঁকোটি দিয়ে কৃষকের উৎপাদিত ফসল পরিবহন করতে সমস্যা হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, ‘বিরিজ ভেঙে যাওয়ায় হামার অনেক অসুবিধা হইসে। এইঠে মেলা অ্যাক্সিডেন্ট হইছে। অনেকে আহত হইছে। হামার এই সেতুটা খুব প্রয়োজন। সরকারের কাছে আবেদন করি তাড়াতাড়ি বিরিজটা যেন করে দেন।’
স্থানীয় মফিজ আলী বলেন, ‘এ সাঁকো থেকে প্রায়ই মানুষ ও গবাদিপশু পড়ে যায়। অনেক সময় রাতে চলাচল করতে গিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। গ্রামের মানুষের জন্য সেতুটা মেরামত করা খুবই দরকার।’
এলাকার একাধিক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, সরকার রাস্তাঘাটের এত উন্নয়ন করছে। সব রাস্তায় সেতু নির্মাণ হয়। আর খানসামা উপজেলাবাসীর জন্য একটি সড়ক হলেও তাতে আজ সেতুর অভাবে যাতায়াতে কষ্ট করতে হচ্ছে। অথচ এ রাস্তা দিয়ে হাজারও মানুষ চলাচল করে। সেতুটি মেরামত বা নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।’
এ ব্যাপারে এক স্থানীয় শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের স্কুলে বর্ষার সময় শিক্ষার্থী কম আসে। তারা ২ কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে আসে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি অতি দ্রুত ব্রিজটি তৈরি করার জন্য।’
এ বিষয়ে আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটি যাওয়ায় সর্বসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতি বছরই টিআর/কাবিখা দিয়ে এ সাঁকো তৈরি করতে হয়। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য এই সাঁকো দেই। এ ব্রিজটি অতি জরুরি এবং প্রয়োজন। ব্রিজটি তৈরি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তা শাহ মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এই সেতুটি ত্রাণের। ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যে পরিমাণের ব্রিজ লাগত সেই রেঞ্জের ব্রিজ ছিল না। তারা ১৫ মিটারের ব্রিজ করেছিল আসলে সেখানে ৬০ মিটারের প্রয়োজন। যেটা পরবর্তীতে আমরা ১০০ মিটারের আওতায় আনতে চেষ্টা করছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই সেতুটি নির্মাণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন