বরিশালের গৌরনদীতে হেরোনা বেগম (৬৩) নামের এক বৃদ্ধাকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী, ছেলে ও পুত্রবধূদের বিরুদ্ধে। তাকে হত্যার পর ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করতে মৃতদেহ টয়লেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এ ঘটনায় স্বামী হায়দার আলী প্যাদা, ছোট ছেলে সুমন প্যাদা এবং পুত্রবধূ রাখি বেগম ও তুলি বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। এ ছাড়া ওই ঘটনায় নিহতের ভাই মনির হোসেন সিকদার বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এর আগে সোমবার (২ অক্টোবর) গভীর রাতে গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের চরদিয়াসুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃতদেহের ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ‘হায়দার আলী প্যাদা ও হেরোনা বেগম দম্পতির ২ ছেলে ও ২ কন্যাসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে ইলিয়াস প্যাদাকে সৌদি আরব পাঠিয়ে এবং অন্য সন্তানদের বিবাহ দিয়ে ভালোভাবেই চলছিল তাদের সংসার। বৃদ্ধ বয়সে এসে হায়দার আলী প্যাদার রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তান ও পুত্রবধূদের কাছে তারা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে প্রায়ই বৃদ্ধা হেরোনা বেগমের সঙ্গে পুত্রবধূ রাখি বেগম ও তুলি বেগমের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে।
নিহতের ভাই মনির হোসেন সিকদার বলেন, ‘প্রায়ই ছোট ভাগিনা সুমন প্যাদা ও অপর ভাগিনার বৌ রাখি বেগম এবং তুলি আমার বোন হেরোনা বেগমকে শারীরিক নির্যাতন করত। গত ৫ দিন আগেও তাকে মারধর করে। মনির সিকদার ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার মীমাংসা করে আসেন। সোমবার ভাগ্নিরা তাদের মাকে দেখতে বাড়িতে আসলে এ নিয়ে হেরোনা বেগমের সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়ে দেয় পূত্রবধূরা। এমনকি তাকে গালমন্দও করে। এজন্য ভাগ্নীরা রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যায়। এ নিয়ে সোমবার রাতে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃদ্ধা হেরোনা বেগমকে মারধর করেন পুত্রবধূরা। তারা শিলপাটার পুতা দিয়ে হেরোনা বেগমের মাথায় আঘাত করে। এতে মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় হেরোনা বেগমের।
তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে বোনের মৃতদেহ বাড়ির পাশে টয়লেটে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হাঁটু ভাজ করে ঝুলিয়ে রাখে তারা। এরপর মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি আত্মহত্যা দাবি করে ছেলে সুমন প্যাদা গৌরনদী মডেল থানা পুলিশকে খবর দেয়।
এদিকে, পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করতে গেলে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হয়। এজন্য ছেলে সুমন প্যাদা, পুত্রবধূ তুলি ও রাখি বেগম এবং স্বামী হায়দার আলী প্যাদাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন থানার দায়িত্বশীল সূত্র।
তবে গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেছেন, ‘মরদেহ যেভাবে ঝুলে ছিল তাতে বোঝা যায়, এটি আত্মহত্যা হতে পারে না। তা ছাড়া নিহতের মাথায় আঘাতের ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্বামী-ছেলে এবং দুই পূত্রবধূকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ‘শিলপাটার পুতা দিয়ে মাথায় আঘাত করায় রক্তক্ষরণে বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় নিহতের স্বামী-এক ছেলে এবং দুই পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনো তাদের আটক বা গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। তা ছাড়া এই ঘটনায় নিহতের ভাই মনির হোসেন সিকদার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করবেন বলে জানিয়েছে। তবে এখনো কোনো মামলা হয়নি।
মন্তব্য করুন