শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ ওঠেছে এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় চুন্নু মিয়া নামে এক রিকশাচালক দীর্ঘ একমাসেরও বেশি সময় ধরে জেল হাজতে রয়েছেন।
স্থানীয় জানান, আসামিদের অধিকাংশই দরিদ্র দিনমজুর কেউ রিকশাচালক কেউবা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে মামলা হওয়ার পরে থেকে তারা থানা পুলিশের ভয়ে স্বাভাবিকভাকে কাজকর্মও করতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সখিপুর থানার চরভাগা ইউনিয়নের পেদাকান্দি এলাকার শাহ আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর জেলা আদালতের আইনজীবী কামরুন নাহার লিপি ও তার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে।
এরই জেরে অ্যাডভোকেট লিপির ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। গত ১৭ আগস্ট শরীয়তপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার লিপি বাদী হয়ে এ চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুন্নু মিয়া, শাহ আলমসহ ৮ জন ও অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় অভিযুক্ত শাহ আলমসহ একাধিক আসামি বলেন, মামলার বাদী অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার লিপি মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরা এ হয়রানির বিষয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যান অবগত আছেন। এখানে চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আমাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। অ্যাডভোকেট লিপি যে বিল্ডিংয়ের কথা উল্লেখ করে চাঁদাবাজি মামলাটি করেছেন ওই ভবন নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আমাদের অন্য একটি জায়গায় নিয়ে অনেক দিন ধরে বিরোধ চলছে। এই মিথ্যে মামলাটি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
ওই মামলার ৬ নং স্বাক্ষী মনির হোসেন বলেন, ‘অ্যাডভোকেট কামরুন নাহার লিপি আমাকে না জানিয়ে এই মামলায় স্বাক্ষী হিসেবে আমার নাম দিয়েছেন। আমি এই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি ওইদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। আমাকে কেন স্বাক্ষী বানালো এটা ওনিই ভালো জানেন। লিপি আপার সাথে দীর্ঘদিন ধরে শাহ আলমের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। তবে চাঁদাবাজি সম্পর্কে আমি জানি না।’
এ বিষয়ে আইনজীবী লিপি বলেন, ‘জমি নিয়ে তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের জেরে আমি চাঁদাবাজি মামলা করেছি এটি সত্য। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা করা হয়নি। আমার কাছে আসামিরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন। এর আগে আসামিরা ২০১২ সালে আমাদের ওপর হামলা চালায়। ওই সময় আমি এবং আমার ভাই আহত হই।’
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার ভেদরগঞ্জ সার্কেল মুসফিকুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না। বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মতামতের ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কারো সাথে অন্যায় করার সুযোগ নাই। তদন্তে প্রকৃত ঘটনার ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন