হুমায়ুন কবির, সাভার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২১ এএম
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বেতন বন্ধ ১৩ মাস, ৪২ কলেজ শিক্ষকের মানবেতর জীবনযাপন

সাভার সরকারি কলেজ। ছবি : কালবেলা
সাভার সরকারি কলেজ। ছবি : কালবেলা

সাভার সরকারি কলেজে আত্তীকরণ থেকে বাদ পড়া ২২ জন অস্থায়ী শিক্ষক এবং ২০ জন অতিথি শিক্ষক ১৩ মাস ধরে বেতন-বোনাস পাচ্ছেন না। এতে এক প্রকার মানবেতর দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এসব শিক্ষকদের।

তাদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিলেও সমস্যা সমাধানে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বকেয়া পরিশোধে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজের সাতটি বিভাগের প্রধানদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সমন্নয়হীনতার কারণে এই সমস্যা সমাধানে গঠিত কমিটির সুপারিশ থাকা সত্বেও দীর্ঘদিন হওয়ার পরও বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না। অধ্যক্ষ একাডেমিক কাউন্সিলের সহসভাপতি উপাধক্ষ্যকে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়ার পরেও সেটি বাস্তবায়ন করছেন না তিনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, সাভার সরকারি কলেজটি সরকারিকরণ করা হয় গত বছর। একই বছরের ১৬ আগস্ট শিক্ষকদের এডহক নিয়োগ আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ওই আদেশে বাদ পরে যান সাভার সরকারি কলেজের ২২ জন শিক্ষক। তবে কলেজে নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন তারা। তাদের সঙ্গে অতিথি শিক্ষক হিসেবে আরও ২০ শিক্ষকও শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। তবে গত ১ বছরে তারা কোনো বেতন-বোনাস পাননি। বেতন-বোনাসের এ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। কলেজের অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময়ে সমস্যা সমাধানে আশ্বাসও দিয়েছেন কিন্তু এখনো তারা বেতন পায়নি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. সাদেক হোসেন বলেন, ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিটি বিষয়ে আমরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। গত এক বছরের বিভিন্ন সময়ে কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়ে সমাধান চেয়েছি। তিনি প্রতিবারই আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই আমাদের দাবি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই যেন এই সমস্যাটির সমাধান করা হয়।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গত বছরের ১৬ আগস্টের পর থেকে আমাদের বেতন-বোনাস বন্ধ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে আমাদের নিয়মিত বেতন-বোনাস দেওয়া হতো। গত এক বছরে বারবারই আমাদের বলা হয়েছে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরাও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষাকার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। কখনোই আমাদের নিষেধ করা হয়নি। কবে সমস্যার সমাধান হবে সেটিও অনিশ্চিত। ঈদেও আর্থিক ভাতা আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের সঞ্চয় যা ছিল তা দিয়েই কোনমতে এতোদিন চলেছি। এখন দূরহ হয়ে পড়েছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির একাধিক শিক্ষকরা জানান, বর্তমানে কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এতে নানান সময়ে কলেজ পরিচালনার ক্ষেত্রে নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন বোনাস না পাওয়ার বিষয়টি কেবলমাত্র একাডেমিক কাউন্সিলের সভা না হওয়ার কারণে সমাধান হচ্ছে না। অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষকে সভা ডাকার নির্দেশ দিলেও তিনি সভা ডাকছেন না।

সভা না ডাকার বিষয়টি স্বীকার করে কলেজের উপাধ্যক্ষ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সহ সভাপতি দিল আফরোজ শামীম কালবেলাকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সভাটি আমার ডাকার কথা। অধ্যক্ষ আমাকে সভা ডাকতে বলেছেন। কলেজের ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে শিক্ষকদের বেতন দেয়ার বিষয়ে এর আগে আমাদের আলোচনা হয়েছে কিন্তু কতদিনের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন বোনাস পরিশোধ করা হবে অধ্যক্ষ এই বিষয়টি আমাদের জানাননি। তাই আমি একাডেমিক কাউন্সিলের সভাটি ডাকা হয়নি। সংকট নিরসনে গঠিত কমিটির অনেকে অস্থায়ী শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি চাই তারা অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবেই থাকুক। অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার কোনো মতোবিরোধ নেই।

এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ মো. ইমরুল হাসান কালবেলাকে বলেন, ২০১৮ সালের আত্তীকরণ বিধিমালা অনুসারে সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথাভাবে মেনে যাদের কলেজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের আত্তীকরণ করা হয়। এই নিয়মের বাইরে কাউকে আত্তীকরণ করা হয়নি। ২০২২ এর ১৬ আগস্ট এডহক নিয়োগ আদেশ জারির সময় সাভার সরকারি কলেজের ২২ জন অস্থায়ী শিক্ষক বাদ পড়েন। তবে ওই অস্থায়ী শিক্ষকরাসহ বেশ কয়েকজন অতিথি শিক্ষক কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তাদের বকেয়া পাওনার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কলেজের ফিক্সড ডিপোজিটে কতো টাকা রয়েছে তা যাচাই এবং সেখানে থেকে বকেয়া পাওনা পরিশোধে করণীয় বিষয় জানতে একটি কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি একটি প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন। এখন একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। ইতোমধ্যে উপাধ্যক্ষকে সভা ডাকার নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করছি তিনি দ্রুতই সভা ডাকবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইতালিতে নাহিদ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার

মধ্যরাত থেকে সোমবার পর্যন্ত কয়েক জেলায় বজ্র ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

প্রাথমিকে হাওর, দ্বীপ ও চরাঞ্চলের শিক্ষকদের জন্য সুখবর

পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ লিটনরা

রাইড শেয়ারের নারী যাত্রীকে ধর্ষণ : আসামির আদালতে স্বীকারোক্তি

পদ হারানোয় আইনি লড়াইয়ে ফারুক আহমেদ, হাইকোর্টে রিট

রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

কুড়িগ্রামে নদনদীর পানি বৃদ্ধি, অব্যহত থাকবে আরও দুদিন

নদীতে আবর্জনা ফেলার অভিযোগে তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বরখাস্ত

কুড়িগ্রামে নজরুল ও ভাওয়াইয়া চর্চাকেন্দ্রের উদ্বোধন

১০

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস, আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং

১১

কে কখন নির্বাচন চায়, একান্তই দলীয় বিষয় : জনতা পার্টি বাংলাদেশ

১২

সাভারে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

১৩

‘শহীদ জিয়াই বাংলাদেশের প্রথম সংস্কার শুরু করেছিলেন’

১৪

পাকিস্তানকে ১৯৭ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

১৫

পুকুরে গোসল করতে নেমে দুই শিশুর মৃত্যু

১৬

ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার পরিবারের প্রতি বেলার খাবার চলমান রয়েছে : আমিনুল হক

১৭

অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে : খন্দকার এনাম

১৮

আনচেলত্তি সাম্বার ছন্দ ফেরাবেন!

১৯

রংপুরে জাতীয় পার্টি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি মামলা

২০
X