শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২
ঝিনাইদহ ব্যুরো
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শৈলকুপায় ইউপি সদস্য খুন, গণ আসামি হওয়ার আতংকে গ্রামবাসী

প্রতিপক্ষের হামলায় ভাংচুরকৃত বাড়ি ঘর। ছবি : কালবেলা
প্রতিপক্ষের হামলায় ভাংচুরকৃত বাড়ি ঘর। ছবি : কালবেলা

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় তুচ্ছ দ্বন্দ্বে গড়াচ্ছে মামলা, বাড়ছে মিথ্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতাও। এতে একদিকে যেমন আদালতে মামলাজট বাড়ছে, তেমনি নিরাপরাধ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্বিষহ ভোগান্তি । এরই ধারাবাহিকতায় গত এক দশকে ৫ সহস্রাধিক নিরাপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। একর পর এক এই প্রবণতা বেড়ে চলায় আতংকিত জনপদের মানুষ ।

এই অবস্থায় আবাইপুর ইউনিয়নের মীনগ্রামের ইউপি সদস্য খুন ও বাড়ি ঘর ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনার পর এবার মামলায় গণ আসামি হওয়ার আতংকে রয়েছে গ্রামবাসী। হত্যা ঘটনার পর সোমবার সকালে নিহতের সমর্থকরা প্রতিপক্ষ গ্রুপের ১৭টি বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এই ঘটনার পর ওই সকল বাড়ি ঘরের বাসিন্দারাসহ অন্তত ৫০ পরিবারের সদস্যরা বাড়িছাড়া হয়েছে। এবার তারা আসামির তালিকায় নাম চলে আসার আতংকে রয়েছে।

এর আগে শৈলকুপার বিভিন্ন গ্রামে এ ধরনের ঘটনায় শত শত ব্যক্তি আসামি হয়েছে । এইভাবে একটি খুনের ঘটনায় শতশত ব্যক্তিকে আসামি করার পাশাপাশি তাদের বাড়ি ঘর ভাংচুর করার কারণে শৈলকুপার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে। একদিকে আসামিরা তাদের জামিন, কোর্ট হাজিরাসহ এই সংক্রান্ত যাতায়াত খরচসহ নানাবিধ খরচ এর পাশাপাশি বাড়ি-ঘর ভাঙার কারণে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত সারুটিয়া, উমেদপুর, মনোহারপু, নিত্যানন্দপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সামাজিক ও রাজনৈতিক কোন্দল থেকে খুনের ঘটনার অন্তত ৫ হাজার মানুষ আসামি হয়েছে। সেখানে একটি খুনের ঘটনায় ৫/৭ ব্যক্তি জড়িত থাকলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে শতশত ব্যক্তিকে। একই সঙ্গে মামলার কারণে ঘরছাড়া হওয়ার সুযোগে বাদী পক্ষ আসামি পক্ষের বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করছে। এমনিভাবে গত এক দশকে ন্যুনতম ৫ সহস্রাধিক নিরাপরাধ ব্যক্তি খুনসহ বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে সেখানে যত খুশি তত নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করে ঘর বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে । বছর থেকে বছর ওই সকল পরিবার বাড়ি ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সম্প্রতি পুলিশ ও মানবিক হৃদয়ের মানুষের সহায়তায় কিছু ব্যক্তি নতুন করে ঘর-বাড়ি তৈরি করে তাদের ভিটায় ফিরে আসলেও আবারও অন্য এলাকার জনপদে নতুন করে বাড়িছাড়া ও গণ আসামি হওয়ার আতংক ভর করেছে শৈলকুপার ভুক্তভোগী মানুষের মাঝে।

এ বিষয়ে জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আ্যাডভোকেট মো. আজাদ রহমান বলেন, উমেদপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে গত ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সাইদুল হত্যা ঘটনার মামলায় ১০৪ জনকে আসামি করা হয়। এর আগে ২০১১ সালে ইউনিয়নের আড়–য়াকান্দি গ্রামে টুলু হত্যা ঘটনায় ৩৩ জন আসামি হয়। উভয় ঘটনায় বাড়ি ঘর ভাংচুর হয় দেড় শতাধিক। যেখানে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হন ভুক্তভোগীরা। আসামি হন বৃদ্ধ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রসহ নিরাপরাধ মানুষ।

শৈলকুপা উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সারুটিয়া ইউনিয়নের আ.লীগের সাবেক সহসভাপতি জুলফিকার আলী কায়সার টিপু বলেন, গত তিন বছরে সারুটিয়া ইউনিয়নে আটটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওই সকল ঘটনায় করা মামলায় ৬ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি নিরাপরাধ। এ ছাড়া এই ঘটনার পর ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাংচুর হয়। বাড়িছাড়া হয় শত শত পরিবার । এই সকল ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অন্তত ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও জেলা আ.লীগের সহসভাপতি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম দুলালের সহযোগিতায় শতাধিক পরিবার বাড়ি ফিরে এসে ঘরবাড়ি করার সুযোগ পেয়েছে। এখনো অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি ছাড়া রয়েছেন।

শৈলকুপা পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও পৌর আ.লীগ এর সভাপতি আশরাফুল আজম বলেন, গত দশ বছরে শৈলকুপায় যে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে সেখানে অধিকাংশ ঘটনায় প্রকৃত আসামি বাদ দিয়ে হাজার হাজার নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এই আসামি করার পিছনে রয়েছে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপকৌশল ।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ১০ বছরে শৈলকুপাতে অনেকগুলো খুনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু ঝিনাইদহ -১ আসনে সংসদ সদস্য তখন কোন বিবৃতি বা সংবাদ সম্মেলন করেন নাই। কিন্তু গত রোববার রাতে আবাইপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মিনগ্রামের হাবিবুর রহমান রিপন নিহত ঘটনায় তিনি সংবাদ সম্মেলনসহ বিবৃতি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শৈলকুপা থানার ওসি ঠাকুর দাস মন্ডল জানান, এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। গণ আসামি করে নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হত্যা মামলায় আসামি করা বিষয়ে তিনি বলেন, মামলায় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে পুলিশ সতর্ক থাকবে যেন কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি আসামি হয়ে হয়রানির শিকার না হন। গত রোববার দিবাগত রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হাবিবুর রহমান রিপন (৪৪) নামের এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও দুইজন। রোববার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার আবাইপুর ইউনিয়নের আবাইপুর বাজারের ওয়াপদা মোড়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর সোমবার ভোরে নিহত ইউপি সদস্যর সর্মথকরা অন্তত ১৫টি বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। নিহত হাবিবুর রহমান রিপন আবাইপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও একই সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ক্যাম্প ন্যু প্রস্তুত না হলে লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

১০

সুদ দিতে না পারায় বসতঘরে তালা, বারান্দায় রিকশাচালকের পরিবার

১১

দেশ বাঁচাতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে : চরমোনাই পীর

১২

এএসপির বাসায় চাঁদাবাজি-ভাঙচুর, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৩

জেলের জালে বড় ইলিশ, ৯ হাজারে বিক্রি 

১৪

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৫

আগামী সংসদ প্রথম তিন মাস ‘সংবিধান সংস্কার সভা’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব

১৬

ধরলার তীব্র ভাঙন, টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি

১৭

নেতা ও ভোটারের জবাবদিহিই হবে শ্রেষ্ঠ সংস্কার : মঈন খান

১৮

পাপের ফল ওদের ভোগ করতেই হবে : রাশেদ খান

১৯

ক্ষমা চাইলেন স্বাধীন খসরু 

২০
X