মোস্তাফিজার রহমান, পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রংপুরে গ্রাহকের ৮ কোটি টাকা নিয়ে ‘সাকসেস’ পরিচালক লাপাত্তা

সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে ইনভেস্ট করে নিঃস্ব ভুক্তভোগীরা। ছবি : কালবেলা
সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে ইনভেস্ট করে নিঃস্ব ভুক্তভোগীরা। ছবি : কালবেলা

রংপুরের পীরগাছায় সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে সমিতি খুলে শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন সমিতিটির পরিচালক জনি মিয়া।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে জনি মিয়া ২০১৮ সালে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর, পীরগাছা থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি সমিতি খোলেন। জনি মিয়া পীরগাছা ও সুন্দরগঞ্জে ওই সমিতির শাখা খুলে ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষজনের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করতে থাকেন। সহজ সরল সাধারণ মানুষজন তার ফাঁদে পা দিয়ে ওই সমিতিতে টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। এভাবে অভিযুক্ত জনি মিয়া সুন্দরগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলার কমপক্ষে শতাধিক গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। প্রথম প্রথম কয়েক মাস মুনাফা প্রদান করলেও একপর্যায়ে জনি মিয়া মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। উপায় না পেয়ে গ্রাহকরা তাদের আসল টাকা ফেরত প্রদানের জন্য চাপ দিলে নানা টালবাহানা করে টাকা না দিয়ে বর্তমানে পরিচালক জনি মিয়া গা ঢাকা দিয়েছেন।

উপজেলার মকসুদ খাঁ গ্রামের ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম কালবেলাকে বলেন, আমি ঢাকা শহরে মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করি। অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। আমি সাকসেস সমিতিতে আমার প্রতিবেশী মোজাফ্ফর হোসেনের ছেলে ওই সমিতির ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবনের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা রেখেছিলাম। প্রথম ৩ মাস আমাকে লাভ প্রদান করা হলেও এখন লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না।

একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী আজিরন বেগম কালবেলাকে বলেন, আমি রাস্তার মাটি কাটার কাজ করি। আমি অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ওই সমিতিতে ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন তারা আমাদের লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না। ম্যানেজার জীবন আমাদের বলেছে সমিতির মালিক নাকি পলাতক রয়েছেন। আমরা সমিতির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ম্যানেজার জীবন সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।

আরেক ভুক্তভোগী রোকসানা বেগম কালবেলাকে বলেন, আমি ওই সমিতিতে ৬০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন তারা বলতেছে তারা একটি টাকাও দিবে না। আরেক ভুক্তভোগী সত্তোর্ধ্ব বৃদ্ধা জরিনা বেগম কান্নাকাটি করে কালবেলাকে বলেন, আমি খুব কষ্টে মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলি। আমি অসুস্থ মানুষ। মানুষের দেওয়া টাকা জমিয়ে আমি ওই সমিতিতে ১ লাখ টাকা রেখেছিলাম। সমিতির ম্যানেজার জীবন আমাকে বলেছিল, দাদি আমাকে টাকাটা দে, আমি তোকে প্রতি মাসে লাভ দিব। এখন তারা আমাকে লাভ-আসল কিছুই দিচ্ছে না।

স্থানীয় সাইদুর রহমান ও হাফিজার রহমান কালবেলাকে বলেন, রামচন্দ্রপাড়ার জনি নামের এক ছেলে সাকসেস সমিতি খুলে ম্যানেজার নিয়োগ দিয়ে লাখ প্রতি মাসে ২ হাজার প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ মানুষদের কাছে টাকা নেয়। টাকা নেওয়ার সময় তারা একটা ফরম পূরণ করে নিত ও পাস বই দিত। কিছুদিন লাভ দিলেও এখন জনি ও ম্যানেজার জীবন গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা চাই এই গরিব অসহায় মানুষদের টাকা যেন উদ্ধার করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় কৈকুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আলম কালবেলাকে বলেন, আমি বিষয়টি আগে জানতাম না। যখন তারা মানুষের টাকা তছরুপ করে তখন আমি খোঁজ নিয়ে শুনেছি, তারা সমিতিতে লাখে ১০-২০ হাজার টাকা কমিশনে কিছু ছেলেকে চাকরি দিয়ে তাদের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করত। এভাবে প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা নিয়ে সমিতির পরিচালক জনি মিয়া পরিবারসহ এখন লাপাত্তা। এখন এই ভুক্তভোগীরা আমার ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছে। আমরা এখন আইনগতভাবে যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেটা করব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতিটির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবনের বাড়িতে গেলে তাদের বাড়িতে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোছা. শাসুন্নাহার বেগম কালবেলাকে বলেন, ওই সমিতিটি আমাদের মাধ্যমে নিবন্ধন করা। আমি দুই বছর হয় এখানে এসেছি। আমি ২০২১ সালে ওই সমিতি অডিট অডিট করেছি। ২০২২ সালে আমার সহকারী করেছে। ২০২৩ সালের অডিট জেলা অফিস থেকে হওয়ার কথা। সম্প্রতি কিছু অনিয়মের বিষয় জানতে পেরে আমি ওই সমিতি পরিদর্শন করার জন্য নোটিশ করেছিলাম। নোটিশ দিতে গিয়ে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। এখন আমরা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক সুমন কালবেলাকে বলেন, সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ নামে একটি সোসাইটি আছে, সমবায়ের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত। যারা গ্রামের দরিদ্র অসহায় নারীদের কাছে মাসিক ভিত্তিতে টাকা নিয়ে তছরুপ করে পালিয়েছে। পালিয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি জানার পরে সমবায় অফিসার এবং থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হঠাৎ অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রধান

ইসিকে ৪০ লাখ ইউরো সহায়তা দেবে ইইউ

ভারতীয়রা কেন অন্ধভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে?

আ.লীগ কার্যালয়ে এবার বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাইনবোর্ড

চমক রেখে ভারতের এশিয়া কাপ স্কোয়াড ঘোষণা

স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব

ভারতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : দুই দেশের সম্পর্ক কি স্বাভাবিক হবে?

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সাক্ষাৎ

সাতক্ষীরা সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মালামাল জব্দ

১০

ডাকসু নির্বাচন / বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্যানেল ঘোষণা

১১

‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ বার্তা ফাঁসকারী পুলিশ সদস্য রিমান্ডে

১২

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বপ্নভঙ্গের হতাশা

১৩

ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকেও পাল্টা জবাব দিল ইসরায়েল

১৪

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এক বছর, কী ভাবছেন ইডেন শিক্ষার্থীরা

১৫

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের নতুন সচিব রফিকুল ইসলাম

১৬

৪০ দিন আগেই কি মানুষ নিজের মৃত্যুর কথা বুঝতে পারে?

১৭

বনানীতে সিসা বারে রাব্বী হত্যায় ৪ আসামি রিমান্ডে

১৮

সীতাকুণ্ডে গণশুনানিতে সমস্যার কথা শুনলেন ডিসি ফরিদা খানম

১৯

আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যমের দাবি / শেষবারের মতো আর্জেন্টিনা জার্সিতে নামছেন মেসি!

২০
X