চলতি বছরের জুলাই ও এবং গত বছরের আগস্ট মাসে দুদফায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এসেছিলেন বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী। সে সময় তিনি নিজেকে জো বাইডেনের উপদেষ্টা ও ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের প্রটোকল দাবি করেন।
ওই সময় তিনি উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার ওসির সঙ্গে একটি স্থানীয় রেস্টুরেন্টে চা খান। আরেফী সে সময় উল্লাপাড়ায় ডাকবাংলোতেও থেকেছেন। সেখানে ফ্যাসেলিটি কম থাকায় তা নিয়ে রাগারাগিও করেছেন এবং স্থানীয় এমপিকে অভিযোগও করতে গেছেন।
সে সময় আরেফীর খালাতো ভগ্নিপতি উল্লাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল বাতেন হিরু পরিবারসহ তাকে সঙ্গ দিয়েছেন।
২০২২ সালের ৬ আগস্ট আব্দুল বাতেন হিরু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার ওসির সঙ্গে রেস্টুরেন্টে আলাপরত বেশ কয়েকটি ছবি ব্যবহার করা পোস্টে হিরু লেখেন, ‘আমার স্ত্রীর আপন খালতো ভাই MR. MIAN AREFY (বেল্লাল ভাই) উল্লাপাড়ায় এসেছিলেন সুদূর ওয়াশিংটন থেকে। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল মানিকদিয়ার। দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করতে ৩৬ বছর পর উল্লাপাড়ায় এসেছেন। অমায়িক এ ভদ্রলোক ৩-৪ দিন প্রশাসনের দেখভালে ছিলেন।’
পোস্টে তিনি মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফীকে মেম্বর অব ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির একজন সদস্য বলে উল্লেখ করেন। পোস্টটিতে তিনি উল্লাপাড়া ও সলঙ্গা থানার ওসির সঙ্গে আলোচনায় জাহিদুল ইসলাম আরেফীর ছবিও দেন।
এদিকে মানিক দিয়ার গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫-৭ মাস আগে একটা মক্তব চালু করেছেন। ওনার জন্ম পাবনা, ওনার বাব-দাদার জন্ম মানিক দিয়া গ্রামে। ওনার বাবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করতেন। সেই কারণে এখানে তাদের খুব একটা যাতায়াত নেই। তিনি মাঝে মধ্যে এসে দান করতেন। ওনার চাচারা মারা গেছেন। চাচাতো ভাইয়েরা রয়েছেন।
উল্লাপাড়া থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আগস্ট মাসে তিনি এসেছিলেন। উল্লাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল বাতেন হিরু আমাকে বলেছিলেন তার স্ত্রীর আপন খালাতো আসছে, সমস্যা হলে দেইখেন। ওনি এ এলাকায় যে স্কুলে পড়ছেন সেটা দেখতে এসেছেন। পরে সলঙ্গা থানার ওসি আর আমি উল্লাপাড়ায় রেস্টুরেন্টে চা খেতে যাই। বাতেন ভাই তখন বলে উনি কিন্তু বড় পদে আছেন। তখনই আমার সন্দেহ হয়। বড় পদে যদি জো বাইডেনের কিছু হয় তাহলে তো সরকারি প্রটোকল পাবে।
পরে আবার এসেছিলেন। আমি এসপি স্যারকে রিপোর্ট করেছিলাম ওনার আচরণের মধ্যে ত্রুটি আছে। তারপর এমপি তাকে ডেকে নিয়েছিলেন। যখন এখানে এসে ডাকবাংলোয় ওঠেন তখন সেখানে তার সঙ্গে ৩-৪ জন দেখা করতে এসেছিল। গোপন সংবাদে জানতে পারি ওনারা বিএনপির এমপি আকবর আলীর লোক। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এসপি ও এমপিকে জানাই। তখন এমপি তার সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় নিজেকে ডেমোক্রেটিক মেম্বর ও জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। তখন আমার কাছে তা মনে হয়নি। পরে বুঝতে পারি আসলে তিনি তার বাপ-দাদার জমি উদ্ধার করতে এসেছেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম বলেন, ‘আমি তাকে ডাকিনি, ওনি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আমি শুনলাম ওনি পুলিশ প্রটোকল চেয়েছেন। ওনি সার্কিট হাউসে থাকতে চেয়েছেন। সার্কিট হাউসে টাকা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। তাকে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। সেখানে থেকে তিনি ফ্যাসেলিটি ভালো না বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। উনি অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন আমার কাছে। আমি তখন বললাম আপিন কে এবং আপনার পরিচয় কি? তিনি তখন আমেরিকার সিটিজেন জো বাইডেনের উপদেষ্টা ইত্যাদি পরিচয় দেন। আমি তার কাছ থেকে পরিচয়ের প্রমাণ বা আইডি কার্ড আছে কিনা জানতে চাইলে তা দেখাতে পারেননি।’
তানভীর ইমাম আরও বলেন, ‘আমার তাকে ভণ্ড মনে হয়। আমি তাকে বললাম আপনি যদি সত্যিকার অর্থে বাইডেনের উপদেষ্টা হয়ে থাকেন তাহলে তো আয়োজন দূতাবাস থেকে করবে। কিন্তু আপনি একা কেন। তখন তিনি বলেন, আমি আপনাকে চিঠি এনে দেখাব। তিনি আকবর আলীসহ বিএনপির লোকজনকে দাওয়াত করে খাইয়েছে। এ বিষয়ে আমি বলেছি আপনি আমেরিকার সিটিজেন, আপনার তো রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কথা। তিনি বলেন, তারা আমার আত্মীয়। তারপর তিনি চলে যান।’
মন্তব্য করুন