শীতকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে টানা দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বর্ষণে কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা পাহাড়বেষ্টিত এলাকাগুলোতে গিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার অনুরোধ করেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্য এলাকায় এলাকায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় যত্রতত্রভাবে কেটে পাহাড়ের ঢালু ও পাদদেশে বসবাস করছে সহস্রাধিক মানুষ। পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন চলতে থাকলে আগামীতে আরও বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পেকুয়া উপজেলা পাহাড়বেষ্টিত তিন ইউনিয়নে সম্পূর্ণ ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় চূড়ায় বসবাস করে আসছে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মাত্রা সম্প্রতি আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পাহাড় ধ্বংসসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব পরিবারগুলোর জন্য অশনিসংকেত দেখা দিতে পারে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের মালিকানাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতায় উপজেলার হাজার হাজার একর বনভূমি ইতোমধ্যে বেহাত হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এসব বনভূমিতে অনুপ্রবেশকারীরা রাতারাতি অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছেন। এদের মধ্যে শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সর্বোচ্চ চূড়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে অন্তত দু’হাজারেরও অধিক মানুষ বর্তমানে বসবাস করছে।
আরও জানা গেছে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনে পেকুয়া উপজেলার টইটং, বারবাকিয়া ও শিলখালী ইউনিয়নে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টরেরও বেশি সরকারি বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমি এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। এক শ্রেণির পাহাড়খেকোরা সরকারি আইন অমান্য করে পানির দামে বিক্রি করে দিচ্ছে এসব বনভূমি।
অপরদিকে এসব পাহাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যে সমস্ত উপকারভোগী হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অংশীদারত্ব দলিল পেয়েছেন তারা গাছ অপরিপক্বস্থায় উজাড় করে মানুষের বসতির জন্য বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, টইটং ইউনিয়নের সংগ্রামের জুম, বটতলীর গহীন অরণ্য মধুখালী, হারখিলারঝিরা, আধার মানিক, পূর্ব ধনিয়া কাটা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের আবাদি ঘোনা, পূর্ব পাহাড়িয়া খালী, চাকমার ডুরি, পূর্ব ভারুয়াখালী, ছনখোলার জুম ও শিলখালী ইউনিয়নের জারুরবুনিয়া, সাপের গাড়া, মাদাবুনিয়া, মাঝের ঘোনা, চিতার ঝিরি, নাপিতার ঘোনা, সবুজ পাড়া, ঢালার মুখ, পূর্ব শিলখালীতে পাহাড়ের মানুষের অবৈধ বসতি।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে শত শত লোকজন পেকুয়ার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বসবাসের জন্য ছুটে এসেছেন। এ ছাড়া, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের সমুদ্রের করাল গ্রাসে ভাঙন কবলিত নিম্নাঞ্চলের মানুষ অনায়াসে বসবাসের জন্য পাহাড়ের দিকে ছুটছে। এ সুবাধে পাহাড়ের বসতি সবচেয়ে বেড়েছে। এসব বসতির ফলে পাহাড়ের জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। তবে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত কয়েক বর্ষা মৌসুমে একাধিক পাহাড় ধসে পেকুয়ায় বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে।
অধিক ঝুঁকিতে এসব পরিবার বসবাস করলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ধরনের পদক্ষেপ। পেকুয়ার সচেতন পরিবেশপ্রেমী মানুষ মনে করেছেন, দ্রুত সময়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে না নিলে দুর্ঘটনা নিশ্চিত।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, বন বিভাগ ইতোপূর্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অনেক অনুপ্রবেশকারীকে পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করেছে। ভবিষ্যতে কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। কাউকে পাহাড়ে থাকতে দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাব থেকে বাচঁতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে মাইকিং করেছি। তাদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করেছি।
মন্তব্য করুন