মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:২৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অদৃশ্য শক্তির বলয়ে খানসামায় দাপিয়ে চলছে ডাম্প ট্রাক

খানসামা উপজেলার খানসামা-দারোয়ানী আঞ্চলিক মহাসড়ক দাপিয়ে চলছে ডাম্প ট্রাক। ছবি : কালবেলা
খানসামা উপজেলার খানসামা-দারোয়ানী আঞ্চলিক মহাসড়ক দাপিয়ে চলছে ডাম্প ট্রাক। ছবি : কালবেলা

উন্নয়ন কে না চায়? এমন প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এককথায় বলে দেয়, অবশ্যই চাই। সেই উন্নয়নকে পুঁজি করে একশ্রেণির কতিপয় অসাধুরা বনে যাচ্ছেন কালো টাকার কুমির। নদীর পাড়ের বালু লুট করছেন বালুখেকোরা। দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে সবার আগে প্রয়োজন জনবল। এরপর রড, সিমেন্টসহ বালু। প্রাকৃতিক সম্পদ এ বালু আসে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে। একটি স্থাপনা তৈরি করতে যে পরিমাণ বালুর প্রয়োজন তার ৫০ গুণ উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন মহলের কাছে। বালু উত্তোলনকারীরা কর্তৃপক্ষকে বোঝায়, আমাদের যে পরিমাণ বালু প্রয়োজন, তা এখনো উত্তোলন সম্ভব হয়নি। বাস্তবে কি তাই? আর এসব বালু আনা নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম এ ডাম্পট্রাক।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার খানসামা-দারোয়ানী আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৭ বছর ধরে পাবলিক বাসের চাকা না ঘুরলেও, ঘোরে শুধু ১০ চাকার শত শত ডাম্পট্রাক। এসব ট্রাক পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলার আত্রাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করে চলছে অবাধে।

বালুভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে সারাদিন বালুভর্তি ট্রাক চলার কারণে বালু উড়ে আশপাশের দোকানসহ পথচারীদের চোখেমুখে ঢুকে পড়ছে। সেই সঙ্গে উড়ে আসা বালু রাস্তার কিনারে এসে জমা হচ্ছে। পরে সেই ছোট বালুর স্তূপের কারণে মোটরসাইকেল আরোহীরা হচ্ছেন দুর্ঘটনার শিকার। শুধু কি তাই? বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে বেপরোয়া এ গাড়ির অতি দ্রুত চলাচলের কারনে ভয়ে আঁতকে উঠছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকগণ।

বিরামহীন ডাম্পট্রাকের আবাধ চলাচলে, রাস্তার বেশির ভাগ অংশ খানাখন্দ হয়ে জনসাধারণের ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়! প্রতি নিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এ ছাড়াও নীলফামারীর সদর ও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল নতুন ব্রিজের কাজ চলমান হওয়া সত্ত্বেও পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েও অবাধে চলছে এ ডাম্পট্রাক। এলাকাবাসী মনে করেন, যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সারাক্ষণ বালুভর্তি ট্রাকের চলাচলের কারণে ধুলোয় অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের মানুষ। অসহ্য ধুলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এ সড়কে ধুলাবালি এতই বেশি যে একটা ডাম্পট্রাক গেলে সামনে আর কিছুই দেখা যায় না। এ সড়কটির ধুলাবালি ঘন কুয়াশাকেও হার মানিয়েছে। ট্রাক চলাচলের কারণে ঘন ধুলাবালিতে দিনকে যেন রাত বলে মনে হয়। রাস্তার ধারে বসবাসরত সাধারণ মানুষ ও দোকানদারদের চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ধুলাবালিতে রাস্তার পাশে গাছের পাতার রং সবুজ থেকে লাল হয়ে গেছে। এলাকাটি ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে নেই কোনো ‘মাথাব্যথা’।

এ ট্রাক বন্ধ করতে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, মাসিক মিটিং এ রেজুলেশন, ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে জরিমানা করলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। এতেই বোঝা যায় যে, এখানে অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। সাংবাদিকগণ একাধিক সংবাদ প্রকাশ করলেও দুই অথবা তিন দিন বন্ধ থাকে এরপর পুনরায় চালু হয়। বেপরোয়া এ ডাম্পট্রাকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সাধারণ জনতা চায় এর স্থায়ী সমাধান। কিন্তু কে করবে এর স্থায়ী সমাধান?

নাম বলতে অনিচ্ছুক ডাম্পট্রাকের এক চালক বলেন, আমরা মহাজনের গাড়ি চালাই। আমি কর্মচারী, তাই মালিক যে পয়েন্ট থেকে বালু আনতে বলে আমি সেই পয়েন্ট থেকে বালু এনে যেখানে দিতে বলে সেখানে পৌঁছে দিই।

এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমিও অনেক আন্দোলন করেছি ড্রাম ট্রাক বন্ধের ব্যাপারে কিন্তু কেউ কোনো আমলে নেয়নি। আমি এ ট্রাক বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই যাব।

কলেজছাত্র সোহেল জানান, এদের বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিপক্ব ড্রাইভার ছাড়াই চলছে ডাম্পট্রাক। অতি দ্রুত সমাধান করা উচিত।

খানসামা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামিউস সুফি সরকার জানান, রাতের বেলা পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারি না। দিনের বেলার কথা বাদই দিলাম। যেহেতু বীরগঞ্জ এলাকার বালুঘাট সেহেতু ড্রাম ট্রাকগুলো বীরগঞ্জ হয়ে ১০ মাইল হাইওয়ে যেতে পারে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেক দৃষ্টি কামনা করছি।

খানসামা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, বালু বোঝাই ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক সমানতালে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। ট্রাকে থাকা ভেজা বালুর পানি দিয়ে পুরো রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পথ চলতে হচ্ছে।

ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, আমি শুরু থেকে এটার প্রতিবাদ করে এসেছি। আমাদের রাস্তাগুলো এ ঘাতক ট্রাক নষ্ট করে দিচ্ছি পাশাপাশি দুর্ঘটনা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ড্রাম ট্রাক অবৈধ আখ্যা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, 'আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রক্রিয়াধীন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মানবাধিকার কর্মীদের আটকের ঘটনা কলঙ্কজনক অধ্যায় : মুহিউদ্দীন রাব্বানী

শিয়ালের কামড়ে মেম্বারসহ আহত ১১

কাশফুলের গালিচায় মোড়া বরিশালের বিসিক

উপ-সহকারীর ভরসায় চলছে ২০ শয্যার হাসপাতাল

মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক 

নদীর স্রোতে তলিয়ে গেল ৩ বোন

‘ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে’, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : আনোয়ারুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টা ও ওসিকে হত্যার হুমকি যুবলীগ নেতার

অ্যানথ্রাক্সে মরছে গরু, আতঙ্কে কমেছে মাংস বিক্রি

১০

নিখোঁজ ৫ জেলের সন্ধান মেলেনি সাত দিনেও

১১

দক্ষ এমডির চরম সংকটে ব্যাংকিং খাত : গভর্নর 

১২

তারেক রহমানের পক্ষে শতাধিক কোরআন বিতরণ

১৩

বিশ্ব রোবটিক্স প্রতিযোগিতা / জিহাদের উদ্ভাবিত রোবট ‘হেক্সাগার্ড রোভার’ পেল স্বর্ণপদক

১৪

‘অসৎ মানুষের কাজে নয়, সমাজ ধ্বংস হয় সৎ মানুষের নীরবতায়’

১৫

গাজা অভিমুখে শহিদুল আলম, তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্ট

১৬

ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডলারের মালিক হলেন ইলন মাস্ক

১৭

বিনা অস্ত্রোপচারে ৮ নবজাতকের জন্ম

১৮

রেকর্ড গড়ে স্বর্ণের নতুন দাম ২ লাখ ছুঁইছুঁই

১৯

যদি বেঁচে থাকি, ভবিষ্যতে তাদের গলায়ও গামছা পরাব : নুর

২০
X