সাগরকন্যা কুয়াকাটায় রোববার (২৬ নভেম্বর) থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত বছর ধরে চলে আসা রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান। দুই দিনব্যাপী রাস মেলা রোববার থেকে শুরু হয়ে সোমবার ভোরে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। ইতোমধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসবে আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস উৎসবকে সামনে রেখে শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরে রংতুলির আঁচড়ে সাজানো হয়েছে প্রতিমাগুলো। মেলায় অংশগ্রহণ করতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান দোকানিরা মেলার সামগ্রী নিয়ে কুয়াকাটায় আসতে শুরু করেছেন। বিগত বছরগুলোতে এ মেলায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লক্ষাধিক লোকের সমাগম হতো। মাঝে দুই বছর করোনা আর এবার যোগ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এ নিয়ে আয়োজকদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। তবুও ভক্তদের বরণ করতে আয়োজকদের কমতি নেই। তবে হরতাল আর অবরোধের কারণে উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কাও কাজ করছে।
জানা গেছে, গঙ্গাস্নান ও রাসমেলা উৎসবকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও কুয়াকাটা পৌরসভা ও মেলা উদযাপন কমিটির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হবে চেকপোস্ট। পুলিশের পাশাপাশি নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও যে কোনো নাশকতা রোধে আনসার, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মোতায়েন থাকবে- এমনটাই পুলিশ প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
অপর দিকে গঙ্গাস্নান ও রাস মেলায় আগত হাজার হাজার পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থী সমাগমকে সামনে রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হোটেল মোটেল ও পর্যটনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানিয়েছেন, আসন্ন মেলা উপলক্ষে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা হোটেলে রাত্রীযাপনে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় পাবে।
এ বিষয়ে কথা হয় শ্রী শ্রী রাধা কৃঞ্চ মন্দিরের পরিচালক ও পুরোহিত ব্রহ্মচারী শিশির মহারাজের সাথে তিনি জানান, আগত হাজার হাজার পুণার্থীদের সমন্বয়ে ২৬ নভেম্বর শ্রী কৃঞ্চের মহা নাম যজ্ঞের মধ্য দিয়ে এ রাস পূজার আরম্ভ হবে এবং ২৭ নভেম্বর বিকেলে শ্রী কৃঞ্চের নামযজ্ঞ শেষে স্নানের মধ্যে দিয়ে রাস পূজা শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসসমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্নার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। প্রচলিত বিশ্বাসের জায়গা থেকে তারা মনে করে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে তাদের স্নানের মধ্যে দিয়ে জাগতিক পাপ মোচন হয়ে থাকে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ জানান, মেলায় আগত দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের বরণ করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। অতিরিক্ত দর্শনার্থীদের চাপকে পুঁজি করে কোনো হোটেল মালিক যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের পুলিশ পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ ধর্মীয় উৎসবকে সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে সমাপ্ত করার জন্য যা যা করার তা করব। কুয়াকাটার দর্শনীয় স্পটগুলো ও মন্দিরের আশপাশে আমরা নিরাপত্তাবলয় তৈরি করব।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাসমেলা ও রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে আগত ভক্তদের নিরাপত্তা প্রদানে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী করা হবে।
মন্তব্য করুন