আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরিতে যাতায়াতে আরিচা ফেরিঘাটে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। টিকিট এজেন্ট সুবহানা এন্টারপ্রাইজের টিকিট কালেক্টররা আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটের বিআইডব্লিউটিসির নির্ধারিত ফেরি ভাড়া ৩৬ টাকার বদলে অতিরিক্ত ৪ টাকাসহ ৪০ টাকা আদায় করছেন। অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই যাত্রীকে ফেরিতে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার কোনো যাত্রীকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সরেজমিন এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
ঢাকা থেকে পাবনাগামী যাত্রী শফিক রহমান বলেন, টিকিটের মূল্য ৩৬ টাকা থাকলেও তারা নিচ্ছে ৪০ টাকা। আমি ফেরি ভাড়া ৪ টাকা বেশি দিতে না চাওয়ায় আমাকে কালেক্টররা টিকিট না দিয়েই ১০ মিনিটের বেশি সময় পল্টুনে দাঁড় করিয়ে রাখে। পরে উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত ৪ টাকা দিয়েই টিকিট নিয়ে তারপর ফেরিতে উঠতে হয়েছে।
আশুলিয়া থেকে পাবনাগামী যাত্রী গার্মেন্টস কর্মী জাহাঙ্গীর আলম জানান, অনেকটা জোর-জবরদস্তি করেই তারা টিকিটের মূল্যের অতিরিক্ত ৪ টাকা ভাড়া বেশি নিচ্ছে। আমি অতিরিক্ত ৪ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার কলার ধরে লাথি মেরে বলে শালা কাজিরহাট থেকে আরিচা আসার সময় টিকিট মূল্যের চেয়ে ৯ টাকা ভাড়া বেশি দিতে পারো আর আরিচা থেকে পাবনা যাওয়ার পথে ৪ টাকা বেশি দিতে পারো না। চার টাকা টিকিট প্রতি আমাদের কমিশন এটা দিয়েই পার হয়ে যেতে হবে ফেরিতে। আর এ ব্যাপার প্রশাসন, সাংবাদিক কাউকে জানালে তোকে সোজা নদীতে ফেলে দেব।
মানিকগঞ্জ থেকে পাবনাগামী যাত্রী ছমিরন বেওয়া অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই বলেন, ‘বাবা যখন যমুনা সেতু চালু হয় নাই তখন উওর-পশ্চিম ও দক্ষিণ বঙ্গের সব মানুষ এই ঘাট দিয়েই যাতায়াত করতো। ওই সময় শুনতাম আরিচা ঘাটে লঞ্চ ফেরিতে মানুষের থেকে জোর করেই টাকা পয়সা রেখে দিত। তখন মনে করতাম এসব মানুষ মিথ্যা বলছে। কিন্তু আজকে বিশ্বাস হলো ঘটনা সত্যি। ফেরি ভাড়া ৩৬ টাকা অথচ তারা জোর করে আমার থেকে নিল ৪০ টাকা। যমুনা সেতু হয়েছে, পদ্মা সেতু হয়েছে দেশও অনেক উন্নত হয়েছে। শুধু স্বভাব বদলায় নাই আরিচা ঘাটের জোর-জবরদস্তি ওয়ালাদের। আর এগুলো দেখারও কেউ নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুবহানা এন্টারপ্রাইজের পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী এক টিকিট কালেক্টর বলেন, ৮-১২ ঘণ্টা করে মাসে ২০ দিন ডিউটি পাই আমরা। দৈনিক হাজিরা মাত্র ৩০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই যুগে এ দিয়ে কি আমাদের সংসার চলে? তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদেরকে যাত্রীদের থেকে টিকিট প্রতি কমিশনের কথা বলে আবার অনেকের থেকে জোর করে হলেও টিকিট মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত চার টাকা বেশি নিতে হয়।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অফিসের বাণিজ্যিক বিভাগের ডিজিএম শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, যাত্রী পরিবহনের টিকিট ইজারাদার নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে টিকিটে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করে ইজারাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন