বন বিভাগের ফরেস্ট্রি সেক্টর প্রকল্পের আওতায়ধীন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ৭৩ লাখ টাকা মূল্যের গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কম মূল্যে এসব গাছ বিক্রি করে ফায়দা লুটছে একটি চক্র। ফলে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
জানা গেছে, ১ হাজার ৫০০টি গাছ প্রায় ৭৩ লাখ টাকা দামে গত ২-৩ মাস আগে নিলামে বিক্রয় করা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১ হাজার ৫০০টি গাছ প্রায় ৭৩ লাখ টাকা দামে গত ২-৩ মাস আগে নিলামে বিক্রয় করা হয়। ৫৩টি লটভিত্তিক বিক্রয়কৃত গাছগুলোর বাজারমূল্য দেড় কোটি টাকার উপরে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মধ্যে ইউক্যালিপটাস, মেহগনি, শিলকড়ই, শ্বেতকড়াই, রেইন্ট্রি, অর্জুন, মিনজিরি, গামার, কৃষ্ণচূড়া, চম্পাফুল, জলপাই, রক্তচন্দন, বকাইন, শিশু, জারুল প্রভৃতি।
প্রকল্পের আওতাধীন ২০-২২ বছর আগে উপজেলার কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের ললিতারহাট সড়ক, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সাপ্পারবাড়ী সড়ক এবং পাটগ্রাম ইউনিয়নের ডাওয়াইপাড়া আঞ্চলিক সড়কে গাছের চারা রোপণ করা হয়। ওই সময় সরকারের পক্ষে বনবিভাগ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে ভূমিহীন, দরিদ্র, কৃষি শ্রমিকদেরকে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্য নির্বাচিত করে।
চারটি সড়কে লাগানো কৃষিজ, ফলজ, বনজ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি এসব গাছের চারা দেখভাল করা ও মেয়াদ শেষে বিক্রয়ের ব্যাপারে নির্বাচিত উপকারভোগী সদস্যদের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে সরকারের বন অধিদপ্তরের পক্ষে রংপুর বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগ।
২০ বছর হতে দেখভালের কাজে নিয়োজিত খোদ প্রকল্পের উপকারভোগী সদস্যরাই সড়কের এসব গাছ ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে জেলা ও উপজেলার বন বিভাগের কর্মকর্তারা গাছ গুলোর দাম নির্ধারণ যথোপযুক্তভাবে করেনি। গাছ গুলোর দর যাচাই, চিহিৃত করা কোনোকিছুতেই স্থানীয় সুবিধাভোগীদের সম্পৃক্ত করেনি। এসব কারণে সদস্যরা ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী গাছ রোপণের ১০ বছর পর সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলার বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, অংশীজন ও আঞ্চলিক কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে দর কষাকষি পূর্বক ন্যায্য বাজার দর নির্ধারণ করে নিলামে বিক্রয় করবেন বিভাগীয় সামাজিক বন বিভাগ। নিলামে বিক্রয়ের অর্থ বন অধিদপ্তর ১০ শতাংশ, ভূমির মালিকানা বা দখলী স্বত্বাধিকারী সংস্থা ২০ শতাংশ, উপকারভোগী ৫৫ শতাংশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ৫ শতাংশ ও বৃক্ষরোপণ তহবিল ১০ শতাংশ হারে বণ্টন করার নিয়ম।
গাছ নিলামে কিনেছেন নীলফামারী জেলার জলঢাকার আইনুল হক। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিলামে ক্রেতার লোকজনেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছ কাটছেন। কম দামে কেনার ব্যাপারে গাছ কাটায় নিয়োজিত একাধিক প্রতিনিধি (নিলামে ক্রেতার) বা ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চাইলে, কেউই কথা বলতে রাজি হননি।
গাছগুলোর নিলামে ক্রেতা আইনুল হক বলেন, ‘আমি তো একাই গাছগুলো নেইনি। ১১টি জায়গায় দরপত্র বিক্রয় হয়েছে। সরকারি দরের উপরে হলে নিলামে বিক্রি দেয়। প্রতিযোগিতা করে সরকারি দরের উপরে দর দিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা ফরেস্টার আব্দুর রহমান কোনো কিছু বলতে রাজি হয়নি।
মন্তব্য করুন