ফেনীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর না থাকায় পানির নিচে ডুবে আছে ২৯ হেক্টর জমির আমন ফসল। এতে ১২৮ মেট্রিক টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে বিপর্যয়ের ফলে কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হাহাকার। সাধারণ কৃষকদের গুনতে হচ্ছে অসহনীয় লোকসান। এবারের আমন ধানসহ মৌসুমি বিভিন্ন শাকসবজিসহ ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার। এ ছাড়া রবিশস্য বুনতে না পারায় দুশ্চিন্তায় সাধারণ কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ফেনীতে এবার আমন মৌসুমে ৬৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর আমন রোপণ অর্জিত হয়েছে। তবে ২৮.৯৫ হেক্টর ১২৮ টন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফসলের ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এদিকে জমি থেকে পানি সরে না যাওয়ায় রবিশস্য গম, ভুট্টা, সরিষাসহ ডাল জাতীয় ফসল ও অন্যান্য ফসলাদি বুনতেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে খাদ্যভান্ডারে ঘাটতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর, কাজিরবাগ, মোটবী, সোনাগাজী উপজেলা, ছাগলনাইয়ার শুভপুরসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে এবারের আমন ধানে বেশ ক্ষতিসাধিত হয়েছে। এ সময় পানিতে নুয়ে পড়েছে আমন ধান। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমির ধান কৃষক ঘরে তুলতে পারবে কি না, এ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
কৃষকরা বলছেন, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে প্রতি একরে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার তিন ভাগের একভাগও উঠবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
এদিকে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড মুহুরী সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ না নেওয়ায় জমির ফসল ধান খেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে দুষছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুল হক রিপন বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির পরে শুধু সচেতনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ফসল নিমজ্জিত হয়ে থাকায় ধান তো শেষ হয়ে গেল। এর সাথে সরকারের প্রণোদনায় কৃষকদের দেওয়া রবিশস্য বুনতেও বিলম্বিত হচ্ছে। এতে করে স্থানীয় কৃষকরাও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
ফাজিলপুরের শিবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম বলেন, তিনি এবার ৫০০ শতক জমিতে আমান ধান চাষ করেছেন। যদি ধানগুলো পানিতে না ডুবত তাহলে ৭৫ মণ ধান ঘরে তুলতে পারতেন। কিন্তু তিনি এবার ২৫ মণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা সন্দেহ করছেন।
অপর কৃষক তাসলিম মুরাদ বলেন, আরও ১৫ দিন আগে জমির ধানগুলো ঘরে তোলার কথা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পানির নিচে নুয়ে পড়া ধানগুলো শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারেনি। যদি জমিতে পানি জমে না থাকত তাহলে আমাদের ধানগুলো নষ্ট হতো না। কৃষক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, চারদিকে খালি বিলে ও জমিতে পানি জমে থাকায় শীতকালীন কোনো সবজি ক্ষেতও করতে পারছি না। সঠিক সময়ে ফসল বুনতে না পারলে কীভাবে আমরা পরিবারের চাহিদা মেটাব।
ফেনীস্থ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন জানান, মুহুরী প্রকল্পের রেগুলেটটের গেটগুলো বন্ধ থাকায় মুহুরী নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। অর্থাৎ গেট খুলে অতিরিক্ত পানি অপসারণ করা হবে।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষকের তথ্য পেয়ে রোববার মুহুরী সেচ প্রকল্পের রেগুলেটরের দুটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই কৃষকদের এ দুর্ভোগের অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্তব্য করুন