পাবনার ভাঙ্গুড়ায় তড়িঘড়ি করে সিজার করায় লাকী খাতুন (২৬) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদার বৈঠকে মোটা অঙ্কের টাকায় দফারফা হয়েছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড বেসরকারি হাসপাতালের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৬টায় ওই গৃহবধূ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উপজেলার রাঙালিয়া গ্রামের আলাউদ্দীনের মেয়ে ও পাশের উপজেলার মহেলা হাট এলাকার আসাদের স্ত্রী।
জানা যায়, কয়েক বছর আগে রাঙালিয়া গ্রামের আলাউদ্দীনের মেয়ে লাকী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয় পার্শ্ববর্তী চাটমোহর উপজেলার মহেলা হাট এলাকার আসাদের সাথে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা হলে বেসরকারি ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড হাসপাতালে ডা. হালিমা খানমের কাছে পরামর্শ নেন। দীর্ঘদিন ডা. হালিমা খানমের কাছে পরামর্শসহ ফলোআপে থাকেন লাকী নামের ওই গৃহবধূ। এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, কয়েক দফায় আল্ট্রাসনোগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান ওই গৃহবধূর স্বজনেরা।
আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৫ জুলাই সন্তান প্রসবের তারিখ ছিল। কিন্তু লাকী নামের ওই প্রসূতির শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ ও ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড হাসপাতালের ডাক্তার হালিমা খানমের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, গত বুধবার বিকেলের দিকে সিজারিয়ানের মাধ্যমে ওই প্রসূতি মা একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন। ঈদের দিন অর্থাৎ সিজারের পরদিন বিকেল ৫টার দিকে ওই গৃহবধূ অসুস্থ বোধ করলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বাইরে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী প্রসূতিকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে রাত ৯টার দিকে প্রসূতি মায়ের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড’র সামনে রেখে রোগী পক্ষের লোকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার একপর্যায়ে হেলথ কেয়ার লিমিটেডের পরিচালকের কক্ষে ঘণ্টাখানেক রুদ্ধদার বৈঠকের পর মোটা অঙ্কের টাকায় দফারফা করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে লাশ নিয়ে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিক এলাকা ত্যাগ করেন। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
ঘটনার বিষয়ে নিহতের স্বজন ফারুক আহম্মেদ আতিক বলেন, ‘ডেলিভারির তারিখ ২৫ জুলাই থাকলেও তড়িঘড়ি করে সিজার করা ঠিক হয়নি। অন্যদিকে ঈদের দিন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে দ্রুত ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া- সব মিলে সন্দেহের জন্ম দেয়।’
তবে রাতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
নিহত প্রসূতি মায়ের স্বামী আসাদ বলেন, ‘আমার সন্তানের মায়ের তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। কীসের থেকে কী হলো বুঝতে পারছি না।’
ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেড’র পরিচালক রাশিদুল ইসলাম লিটন বলেন, ‘এটা একটা দুর্ঘটনা। নিহত প্রসূতির স্বজনদের সাথে আলোচনা হয়েছে। আলোচনান্তে তারা লিখিত দিয়ে লাশ নিয়ে গেছে।’
ঘটনার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ ও ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের ডা. হালিমা খানম বলেন, ‘ওই রোগীর অপারেশন স্বাভাবিক হয়েছিল, তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু গায়ে-পায়ে পানি ধরে ছিল। রোগীর সমস্যা হলে ঈদের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন না ধরার বিষয়ে বলেন, তিনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন।’
মন্তব্য করুন