দেশের সর্ববৃহৎ চলনবিলে অনুকূল পরিবেশ ও বিলের কারণে পলিমাটিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ ছাড়াও মৌসুমের শেষের দিকে এসে দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের আশায় চাষিরা বিঘা বিঘা জমিতে চাষ করছেন এই পেঁয়াজ।
জানা গেছে, চলনবিল অঞ্চলে প্রতিবছরই বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে বিল থেকে পানি নেমে গেলে এই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতেই ফাঁকা জমিতে কম খরচে পেঁয়াজ আবাদ বেড়েছে নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, পাবনার ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া বিনোদ, নাদোসৈয়দপুর, হামকুরিয়া, সগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
এ অঞ্চলের কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ মৌসুমে প্রায় ১১ হাজার ৩ হেক্টর জমিতে বারি-১, বারি-৪ ও তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এ চাষে প্রকারভেদে প্রায় ১২ লাখ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সগুনা ইউনিয়নের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, এলাকায় চাষিরা দুটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আর হালি পদ্ধতিতে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। মূলকাটা পদ্ধতিতে আবাদ করা নতুন পেঁয়াজ ডিসেম্বর মাসের শেষে ও জানুয়ারি মাসের প্রথমে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজ হাটে উঠতে শুরু করে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে মার্চ মাসের প্রথমে।
তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের নাদোসৈদপুর গ্রামের কৃষক সাইফুল প্রামাণিক বলেন, চলতি বছর প্রায় ৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আবাদ করতে বাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার ছোট পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। ৩ মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ঘরে তুলতে আরও প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আবহাওয়া অনূকূল থাকলে ৬৫ থেকে ৭০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারব।
চরকুশা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় চলতি বছর মুড়িকাটা তাহের পুরি জাতের পেঁয়াজের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার দর ভালো হলে লাভবান হবো। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫ মণের মতো মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। তেমন শ্রমিক খরচের প্রয়োজন না হওয়ায় এ পেঁয়াজ আবাদ লাভজনক।
একই গ্রামের আরেক কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম চড়া। তবে আমি বারী-১ জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। এ আবাদে সেচ, শ্রমিক, সার ও কীটনাশক খরচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। খরচ কম ও বাজারদর ভালো হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে পেঁয়াজের আবাদ বেড়েছে।
ধামাইচ গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ ভালো ফলনের কারণে প্রতি বছরই এ অঞ্চলের কৃষকরা পেঁয়াজ আবাদ করে থাকেন। আর প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে ২০-২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বিঘা প্রতি প্রায় ৩৫-৪০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদি মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন জানান, চলনবিলাঞ্চলে সর্বোচ্চ অর্থকরী ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ অন্যতম। এ অঞ্চলের কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রতি বছরই পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এ বছর পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা বেশি। এ বছর তাড়াশ উপজেলায় ৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে।
মন্তব্য করুন