এবার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোন আছাড় মেরে ভেঙে ফেলেছেন রাজশাহী-০১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের মালিকানাধীন নগরীর থিম ওমর প্লাজায় নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক ঘরোয়া বৈঠকে এমন কাণ্ড করেন তিনি।
এর আগে গত বছর রাজাবাড়ী কলেজের প্রিন্সিপাল সেলিম রেজাকে হকস্টিক দিয়ে পিটিয়ে একদফা খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ফারুক।
দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক ডাকেন সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী। এ সময় ফারুক চৌধুরী ঘোষণা দেন সভায় কোনো মোবাইল ফোন সচল থাকবে না। সবাইকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে টেবিলে জমা রাখার নির্দেশ দেন তিনি। এরপর নেতাকর্মীদের কাছে একে একে আসন্ন নির্বাচনে ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত জানতে চাওয়া হয়।
সভায় নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহি প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। মাহি প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নৌকাকে জেতাতে তাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। এরই মধ্যে যদি গোলাম রাব্বানী প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া কঠিন হবে। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে।
নেতাকর্মীরা জানান, শেষপর্যায়ে ফারুক চৌধুরী বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হকের ফোনে কল বেজে ওঠে। এটা দেখেই ক্ষেপে যান ফারুক চৌধুরী। এ সময় তিনি দ্রুত নাজমুল হকের কাছে গিয়ে তার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একজন নেতাকে বলেন, তুই ফোনটা ভেঙে ফেল। ওই নেতা মোবাইল ফোন ভাঙতে ইতস্তত করলে নিজেই ফোনটা হাতে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন ফারুক। ভাঙা ফোনের টুকরোগুলো কুড়িয়ে টেবিলের ওপর জমা করতে বলেন কয়েকজনকে। ভাঙা ফোন পরে নাজমুলের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ফারুক চৌধুরীর এমন কাণ্ড দেখে হতবাক হন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে ভেঙে চুরমার হওয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে নাজমুল সভাস্থল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হক জানান, এ ঘটনায় আমি খুব অপমানিত বোধ করছি। ঘটনার সময় গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস মামা আমাকে ফোন করেছিলেন। এ কারণে আমি ফোনটা রিসিভ করেছিলাম। আমি ফোনটা ধরে শুধু বলেছি, মামা আমি পরে আপনাকে ফোন করছি। এরই মধ্যে এমপি সাহেব ফোনটা নিয়ে ভেঙে দিলেন। আমি আর কী বলতে পারি।
এদিকে নাজমুলের মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলার কিছুক্ষণ পর ফারুক চৌধুরী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নাজমুলের ফোনটা তো ভেঙে ফেললাম রাগ করে। তোমরা কে আছো নাজমুলকে একটা নতুন ফোন কিনে দিতে পারবা হাত তোলো। এ সময় গোদাগাড়ী পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন হাত তুলে বলেন, আমি কিনে দেব। এরপর তারা নাজমুলকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
ঘটনার সময় উপস্থিত গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একটি বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। এমপির এমন আচরণে আমরা খুবই মর্মাহত ও বিব্রত। নাজমুল একজন নিরীহ মানুষ। স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হয়েছে। সবার মুখে মুখে এমপির এমন কাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন নির্বাচনে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছি।
মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলার এমন ঘটনা সম্পর্কে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন