বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও বিএনপির সাবেক নেতা ডা. জিয়াউল হক মোল্লার মালিকানাধীন ‘মেসার্স হক অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের পেট্রোল পাম্প ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে শহরতলীর বনানী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত ওই পাম্পে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) মধ্যরাতের পর এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় বিএনপি জড়িত বলে দাবি করেছেন ডা. জিয়াউল। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে তারা ধ্বংসাত্মক ও আমানবিক কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সাখওয়াত হোসেন ও নৈশ প্রহরী আজমল হোসেন জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত পৌনে ৩টার দিকে অন্তত ১২ জন দুুর্বৃত্ত হামলা চালায়। তারা হাতুড়ি দিয়ে ফিলিংস্টেশনের ৫টি ডিসপেন্সিং ইউনিট (অকটেন ও পেট্রোল দেওয়ার যন্ত্র) ভাঙচুর করে। এরপর পেট্রোলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল ও অটোরিকশাযোগে সেখানে পৌঁছে হামলা চালায় বলেও জানান তারা।
পাম্পে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অন্তত ১২ জন যুবক পাম্প থেকে অকটেন ও পেট্রোল দেওয়ার ৫টি যন্ত্র ভাঙচুর শুরু করে। ভাঙচুরের পর দুর্বৃত্তরা ওই ৫ যন্ত্র লক্ষ্য করে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে আগুন ধরে যায়। ঘটনার পরপরই সেখানে টহল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের সাহায্যে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
হামলার বিষয়ে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, ‘আগামী ১৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। বিএনপির অনেকেই চায় আমি মনোনয়নপত্রটা প্রত্যাহার করে নেই। এ কারণেই তারা আমাকে ভয় দেখাতে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করেছে। ফিলিংস্টেশনের ব্যাপক ক্ষতি করেছে, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে। সেখানে ৬টি মেশিন নষ্ট করেছে, মেশিনের যে সংযোগ তাও নষ্ট করেছে। আমি মনে করি, আমার এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ তার দলীয় আনুগত্য প্রকাশের জন্য, দলের কাছে ভালো থাকার জন্য এগুলো করে বেড়াচ্ছে। হামলাকারিদের সিসি টিভি ফুটেজ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সংগ্রহ করেছেন, তারা হামলায় জড়িতদের বের করতে পারবেন। তাদের আক্রোশটা আমার ওপরে বেশি, অথচ আমার দলীয় কোনো পদ-পদবি নেই। আমার জনপ্রিয়তার কারণেই তাদের আক্রোশটা বেশি। কিন্তু এবারের নির্বাচন থেকে আমার সরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, আমি নির্বাচনে থাকব।’
শাজাহানপুর থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, দুর্বৃত্তরা ওই পেট্রোল পাম্পে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় তারা পাম্পে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে পালিয়ে যায়। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে ১১ ডিসেম্বর কাহালু উপজেলার তিনদিঘী বাজারে ডা. জিয়াউল হক মোল্লা নির্বাচনী প্রচার চালাতে গেলে তার ওপরে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় স্বতন্ত্র এই প্রার্থী ও দুই কর্মীও সেদিন আহত হন। ওই সময়ও তিনি হামলার জন্য বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনকে দায়ী করছিলেন। ওই ঘটনার পরদিন কাহালু থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়।
প্রসঙ্গত, ডা. জিয়াউল হক মোল্লার বাবা আজিজুল হক মোল্লা বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৪ সালে আজিজুল হকের মৃত্যুর পর ডা. জিয়াউল হক মোল্লাকে বিএনপি মনোনয়ন দিলে তিনি সংসদ সদস্য হন। পরে আরও তিনবার ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সে সময় তিনি বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
মন্তব্য করুন