ফুলের গাছ খেয়েছিল কয়েকটি ছাগল। আর তাতেই গাছ খাওয়ার অপরাধে ছাগলগুলোকে থানা সংশ্লিষ্ট একটি রুমে আটক রাখা হয়। এরপর টাকার বিনিময়ে ছাগলগুলোকে ছেড়ে নিয়ে যেতে হয়েছে স্ব স্ব মালিকদের। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে থানায়। ওই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আটককৃত ছাগলগুলো ছেড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানান ছাগল মালিকেরা।
জানা যায়, গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দিনব্যাপী সান্তাহার রেলওয়ে জংশন স্টেশনের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ সদস্যদের দিয়ে প্রায় ১৪টি ছাগল থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হয়। জংশন স্টেশনটির এই থানার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য থানার পাশে খোলা জায়গায় কিছু ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ওসি মোক্তার হোসেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিনি কিছু গাছ কিনে নিয়ে আসেন। আর সেই গাছগুলো ছাগলে খেয়ে ফেলে। আর তাতেই রেগে যান ওসি মোক্তার। এরপর তিনি একে একে সব ছাগল ধরে নিয়ে আসেন পুলিশ সদস্যদের দিয়ে। আটক রাখা হয় থানা এলাকায় আলামতের ঘরে। ছাগল মালিকেরা তাদের ছাগলগুলো খোঁজ করতে থাকে। একপর্যায়ে জানতে পারেন ফুলের গাছ খাওয়ার অপরাধে রেলওয়ে থানায় আটক রাখা হয়েছে ছাগলগুলো।
পরে ছাগল মালিকরা ছাগল নিতে গেলে থানার ওসি বলেন, রেলের ভিতরে ছাগল এসেছে কেন? ছাগলগুলো ফুলের গাছ খেয়েছে তাই দেওয়া হবে না। এরপর বিপাকে পড়েন ওইসব দরিদ্র ছাগল মালিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারলেও ছাগলপ্রতি ১০০ টাকা করে দিয়ে ছেড়ে নিয়ে যায়।
এদিকে ফুলের গাছ ছাগলে খেয়ে থাকলে ছাগলগুলোকে খোঁয়াড়ে দিতে পারত। তা না করে টাকা নিয়েছে। তাহলে কী থানার পাশে খোঁয়াড়ের ব্যবস্থা করেছে, অভিযোগের সুরে প্রশ্ন করেন একাধিক ছাগল মালিকসহ স্থানীয়রা।
ছাগল নিতে আসা শহরের চা বাগান এলাকার সিয়াম নামের এক স্কুলছাত্র বলেন, আমার খালার ৪টি ছাগল আটক রেখেছিল রেলওয়ে থানায়। আমি নিতে গেলে প্রথমে সাতশ টাকা চাওয়া হয়। আমার সাথে একজন ছিলেন। অনেক অনুরোধের পর তিনশ টাকা দিয়ে ছাগলগুলো নিয়ে আসতে হয়েছে। পুলিশের পোশাক পরে একজন টাকা নিয়েছেন। ফুলের গাছ খাওয়ার অপরাধে ছাগলগুলো আটক রাখা হয়েছিল। তাই টাকা দিয়ে ছাড়তে হয়েছে।
ছাগল মালিক রহিম বাবু জানান, আমি জানতে পারি, আমার ৪টি ছাগল ধরে নিয়ে গিয়ে আটক রাখে থানায়। পরে তিনশ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে নিয়ে আসতে হয়েছে ছাগলগুলো।
এ ব্যাপারে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি মোক্তার হোসেন বলেন, রেলওয়ে ধারা অনুযায়ী ছাগল ঢোকার কথা না, তার ওপর আবার আমার বাগানে এসে ফুলের গাছ খেয়েছে। থানার পুলিশ সদস্যরা দেখতে পেয়ে ছাগলগুলো আটক করে নিয়ে আসে। তবে ছাগলের সংখ্যা আমার মনে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তীতে ছাগলগুলো মালিকদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কেউ যদি বলতে পারে টাকা নেওয়া হয়েছে তাকে থানায় নিয়ে আসেন, আমি তার সামনে সব পুলিশ সদস্যকে হাজির করব কে নিয়েছে। তা ছাড়া ছাগল নিয়ে ভাবার কোনো সময় নেই বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন