আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েই ভোটের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন। গতকাল সোমবার সকালে রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে প্রতীক বরাদ্দ দেন রাজশাহী জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এরপরই ৬টি সংসদীয় আসনে ৩৮ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধের প্রচারে নামেন।
বিশেষ করে প্রায় সবকয়টি আসনেই গতকাল সোমবার নৌকার প্রার্থীদের গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে রাজশাহী-০২ (সদর) আসনে ১৪ দল সমর্থিত নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-০৪ (বাগমারা) আসনে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ এবং রাজশাহী-০৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে নিজ নিজ এলাকায় জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ কালবেলাকে বলেন, ‘বাগমারার মানুষ আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। আমি প্রথম দিনের গণসংযোগে গিয়ে আরো বেশি অনুধাবন করতে পেরেছি এই অঞ্চলের মানুষ আমাকে কত বেশি ভালোবাসে।’
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের নৌকার প্রার্থী মো. আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘মানুষ চায় উন্নয়ন আর সুখে-শান্তিতে বসবাস। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জন্য যা করেছে তা অবিস্মরণীয়। সুতরাং পুঠিয়া-দুর্গপুরের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
এর আগে সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ৬টি সংসদীয় আসনের ৩৮ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন। রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থী শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া মাহি ট্রাক, ন্যানশাল পিপল্স পার্টির নুরুন্নেসা আম, জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন লাঙ্গল, তৃণমুল বিএনপির জামাল খান দুদু সোনালী আঁশ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতির মুক্তিজোটের বশির আহমেদ ছড়ি, বিএনএফের আল সামাদ টেলিভিশন ও বিএনএমের সামসুজ্জোহা বাবু নোঙর প্রতীক পেয়েছেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা, জাসদের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী মশাল, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন লাঙ্গল, বিএনএমের কামরুল হাসান নোঙর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মারুফ শাহরিয়ার ডাব ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ইয়াসির আলিফ বিন শাহরিয়ার ছড়ি প্রতীক পেয়েছেন।
রাজশাহী-৩ (মোহনপুর-পবা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ নৌকা, বিএনএমের মতিউর রহমান মন্টু নোঙর, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির সইবুর রহমান আম, বিএনএফের বজলুর রহমান টেলিভিশন, জাতীয় পার্টির আব্দুস সালাম খান লাঙ্গল ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এনামুল হক ছবি প্রতীক পেয়েছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদ নৌকা, জাতীয় পার্টির আবু তালেব প্রামাণিক লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক কাঁচি, পিপল্স পার্টির জিন্নাতুন নেসা জিন্নাহ আম, বিএনএমের সাইফুর রহমান রায়হান নোঙর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুল হোসেন মাথল প্রতীক পেয়েছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ দারা নৌকা, জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন লাঙল, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির আলতাফ হোসেন মোল্লা একতারা, স্বতন্ত্র ওবায়দুর রহমান ঈগল, গণফ্রন্টের মখলেসুর রহমান মাছ ও বিএনএমের শরিফুল ইসলাম নোঙর প্রতীক পেয়েছেন।
এছাড়া, রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আওয়ামী লীগের শাহরিয়ার আলম নৌকা, জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন রিন্টু লাঙ্গল, স্বতন্ত্র রাহেনুল হক কাঁচি, ন্যাশনাল পিপল্স পার্টির মহসিন আলী আম, বিএনএমের আব্দুস সামাদ নোঙর ও জাসদের জুলফিকার মান্নান জামী মশাল প্রতীক পেয়েছেন।
প্রতীক পেয়েই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। মূল সড়ক ও অলিগলিতে শুরু হয়েছে নৌকাসহ বিভিন্ন প্রতীকের স্লোগান। এতে রাজশাহী জেলার সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। চায়ের দোকানের আড্ডাতেও চলছে নির্বাচনের আলোচনা।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, রাজশাহীর ৬টি আসনে মোট ৪৪ জনের প্রার্থীতা বৈধ হয়। রোববার শেষদিনে ৪ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। এরপর রাজশাহী-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী কামালের মনোনয়ন দল থেকে বাতিল করা হয়। অন্যদিকে রাজশাহী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর মধ্যে একজনকে সরিয়ে দেওয়া হয় দলীয় সিদ্ধান্তে। বর্তমানে ৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ জন।
উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পেয়েই প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচারের জন্য সময় পাবেন তারা।
মন্তব্য করুন