বিএনপির ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন। কারণ এটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান। যে কারণে দলটির নেতাকর্মীরা মনে করে, গাবতলী জিয়া পরিবারের জন্য ‘সংরক্ষিত’ নির্বাচনী এলাকা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বারবার এই আসন থেকেই নির্বাচন করেছেন। বিএনপিবিহীন এবারের নির্বাচনে সেই খালেদা জিয়ার আসনেই ৫০ বছর পর নৌকার জয় হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু নৌকা প্রতীকে ৯১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির এটিএম আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু। তিনি লাঙ্গল প্রতীকে ৬ হাজার ৮০১ ভোট পেয়েছেন। ৫০ বছর পর আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এই প্রথম এই আসনটিতে জয়লাভ করলেন।
এ আসনে মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ১২ হাজার ২৫৮ জন। এর মধ্যে এবার ভোট পড়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫১টি। বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৪টি।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজার রহমান পটল। এরপর ১৯৭৯ সালে বিএনপির সিরাজুল ইসলাম তালুকদার, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আমিনুল ইসলাম সরকার পিন্টু সংসদ সংদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১৯৯৬ (১২ জুন), ২০০১ এবং সর্বশেষ ২০০৮ সালে পরপর পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপিপ্রধান বেগম খালেদা জিয়া।
ভোটের ফলে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে এ আসনে প্রথম প্রার্থী হন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া। সেই নির্বাচনে তিনি ভোট পান ৮৩ হাজার ৮৫৪। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী টিএম মুসা পেস্তা ভোট পান ২৪ হাজার ৭৬০।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ভোট পান ১ লাখ ৭ হাজার ৪১৪ এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওয়ালিউল হক বিলু মাস্টার ভোট পান ২৫ হাজার ২৭৬। একইভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া ভোট পান ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫২২। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন কামরুন্নাহার পুতুল। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৫ হাজার ৬২৬।
এরপর সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২ লাখ ৩২ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী জাপানেতা মুহম্মাদ আলতাফ আলী। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৯২ হাজার ৮৩৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন তিনি। সেই নির্বাচনে এ আসনে ‘না’ ভোট পড়েছিল ১ হাজার ৫৮৭টি।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় মহাজোট সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির অ্যাড. আলতাফ আলী এমপি নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সারা দেশে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও এই আসনটিতে আইনি জটিলতায় বিএনপির প্রার্থী শূন্য হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রেজাউল করিম বাবলু বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী এমন গুজব তুলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এবার বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় ৫০ বছর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু নৌকা নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে এই আসনে মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে এটিএম আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ কংগ্রেস ডাব প্রতীকে ডা. মেহেরুল আলম মিশু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ মশাল প্রতীকে আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় পার্টি জেপি বাইসাইকেল প্রতীকে আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ছড়ি প্রতীকে এনামুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি আম প্রতীকে ফজলুল হক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নোঙ্গর প্রতীকে রনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচি প্রতীকে নজরুল ইসলাম মিলন, চার্জার লাইট প্রতীকে আমজাদ হোসেন, কেটলি প্রতীকে নজরুল ইসলাম, ঈগল প্রতীকে সরকার বাদল এবং আবারো ট্রাক প্রতীকে বর্তমান এমপি রেজাউল করিম বাবলু।
মন্তব্য করুন